প্রচ্ছদ ধর্ম ও জীবন ইসলাম জিন্দা হোতা হায়' হার কারবালাকে বা'দ
ইসলাম জিন্দা হোতা হায়' হার কারবালাকে বা'দ
হাফেজ ক্বারী মুহাম্মদ জাকির আশরাফী | ১০:১৫ পূর্বাহ্ন, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
হাফেজ ক্বারী মুহাম্মদ জাকির আশরাফী: ইসলাম জিন্দা হোতা হায়' হার কারবালাকে বা'দ। অর্থাৎ- ইসলাম পূনজ্জীবন লাভ করে কারবালার পর। মুসলমান জাতি বিভিন্ন দলে ও মতে বিভক্ত। এই মতভেদের একমাত্র কারণ হল আহলে বাইতকে অস্বীকার করা।
১৮ জিলহজ্ব ১০ হিজরী ২১ মার্চ ৬৩২ খৃষ্টাব্দে নবী করিম (দ.) কর্তৃক গাদিরে খুমে মাওলা আলী (কা.)-এর প্রতিনিধিত্ব (মাওলাইয়াত) ঘোষণা করা হয়। আর এই ঘোষণাকে মেনে না নেয়ার কারণে একটার পর একটা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। মাওলাইয়াতকে অস্বীকারের ফলে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। আর উমাইয়া এবং আব্বাসীয় খলিফাগণ নবীর ঘোষিত ইমামগণের উপর বিভিন্নভাবে হত্যা নির্যাতন চালায়। উমাইয়া খলিফাগণ ৮৯ বৎসর এবং আব্বাসীয় খলিফাগণ ৫০৮ বৎসর মুসলিম জাতিকে শাসন করেছে। তারা দীর্ঘ ৫৯৭ বৎসর ক্ষমতায় ছিল। ১২ জন ইমামের মধ্যে ১১ জনকেই হত্যা করা হয়। শুধুমাত্র ইমাম মেহেদী (আ.) ২৭৩ হিজরীতে গায়েব হয়ে যান।
মাওলা হোসাইন (রা.) হলেন ইমামগণের মধ্যে তৃতীয় ইমাম এবং নবী করিম (দ.)-এর নাতি এবং মাওলা আলী ও মা ফাতেমা (রা.)-এর সন্তান। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মবাদী সত্য ও ন্যায়ের বিমূর্ত প্রতীক, মুসলমানদের হাদী অর্থ হেদায়েত দাতা। আর এজিদ হল আবু সুফিয়ানের নাতি। এই আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা নবী করিমের চাচা আমির হামজা (রা.)-এর বুক ছিরে কাঁচা কলিজা মুখে চিবিয়ে ছিল। এই ঘরের সন্তান মুয়াবিয়া আর তার কুখ্যাত সন্তান এজিদ। সে এজিদ তার পিতা মুয়াবিয়া কর্তৃক খলিফা নির্বাচিত হয়। মাওলা হোসাইন (রা.) তাঁর ৭২ জন সঙ্গি সাথী নিয়ে কারবালায় এজিদ কর্তৃক নির্মমভাবে শহীদ হন।
মাওলা হোসাইন (রা.) ও এজিদের মধ্যে বিরোধ ছিল আনুগত্যের। আহলে বাইতগণ কখনও কুফরীর নিকট আনুগত্য করতে পারেন না। তাই মাওলা হোসাইন (রা.) ও এজিদকে খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দেন নাই। বরং নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। কারবালার ঘটনা ছিল সত্য এবং মিথ্যার লড়াই যা বর্তমানেও অব্যাহত আছে। মুসলিম বিশ্বে প্রধানত দুটি পথ রয়েছে, একটি হল আহলে বাইতগণ ও তাঁদের নীতি আদর্শ অপরটি হল খলিফাগণ এবং তাদের নীতি আদর্শ। মাওলা হোসাইন (রা.)-এর আদর্শই ধর্ম এবং ইসলাম। এজিদি ধর্ম এবং আদর্শ কখনও মুসলমানদের সঠিক পথ ও হেদায়েত দিতে পারে না।
জনাব মনসুর আলম কাদেরীর ভাষায়ঃ- যিনি কারবালার প্রজ্বলিত অগ্নি শিখাসম উত্তপ্ত মরুভূমিতে ঘুমাচ্ছেন তিনি প্রিয় নবী (দ.)-এর দুলাল হোসাইন। ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্থ, তবুও সত্যকে যিনি বিসর্জন দেননি তিনিই হোসাইন। যিনি নিজ রক্তে পৃথিবীর যাবতীয় পাপরাশিকে বিধৌত করেছেন তিনিই হোসাইন। হযরত সালেহ পয়গাম্বর আল্লাহর রাহে উট কোরবানী দিয়েছিলেন, আর আমাদের আধ্যাত্মিক পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর পূত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানী দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। বাস্তবতঃ- সে কোরবানী করতে হয়নি। আর হোসাইন, তাঁহার ভাই বন্ধু-বান্ধব, সহচর, শিশু-কিশোর, যুবক ও পূত্রদের দ্বীনের জন্য, ধর্মের জন্য নানা জানের উম্মতের জন্য একে একে কোরবানী দিলেন।
তিনিই হোসাইন সর্বশোকে কাতর তথাপি যিনি রোদন করেননি; তিনিই হোসাইন সর্বাপেক্ষা অত্যাচারিত জর্জরিত, ব্যথিত, বেদনাহত; তথাপি তিনি কোন অভিশাপ দেননি। সবকিছু হারিয়ে যিনি কিছুই হারান নি তিনিই হোসাইন। তিনিই হোসাইন যিনি দ্বীনকে, সত্যকে, ন্যায়কে, গণতন্ত্রকে উচ্চতর শিখরে সুদৃঢ়ভাবে সংস্থাপন করেছেন। তিনিই হোসাইন যিনি নিজ জীবনের শেষ রক্তবিন্দু, দেহ মোবারকের অনু পরমানু কারবালার ধুলিকণায় কোরবান করে নানা জানের প্রিয় দ্বীন ও উম্মতকে দুনিয়ার বুকে, আখেরাতের বুকে সুপ্রতিষ্ঠা করে গেলেন তিনিই-তিনি সৈইয়্যদুশ শুহাদা, শহীদ সম্রাট, বাদশাহর বাদশাহ, ইমাম হোসাইন (রা.)।
মুহম্মদ গুল আস্ত আলী বু এ গুল,
বুওয়াদ ফাতেমা আন্দর আঁ বরগে গুল,
চঁ ইতরাশ বর আমদ হুসাইন ও হাসান,
মো আত্তর শুদ আয ওয়াই যমীনো যমান।
অর্থাৎ- ফুলটি হলেন মুহাম্মদ (দ.) আর সে ফুলের খুশবু হলেন আলী (কা.) পাপড়ি হলেন মা ফাতেমা (রা.) আর ঐ-ফুলের নির্যাস হলেন ইমাম হাসান (রা.) এবং হোসাইন (রা.)।
সবার জীবনেই কারবালা" আছে। ইহাতে হোসাইন পক্ষ সমর্থন করিয়া মৃত্যুকে বরণ করিলে সেই মৃত্যু মধুর চেয়ে মিষ্টি।
কারবালা আজও শেষ হয় নাই, ইহা চিরন্তন। আজও মোহাম্মদী আদর্শ" তথা হোসাইনী আদর্শ সমাজে গ্রহণ করিলে কারবালার জন্য প্রস্তুত থাকিতে হইবে। এর মূল উদাহরণঃ- শহীদ আল্লামা শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকী (রহ.)।
যেই মুহুর্তে মানুষ সত্যকে হৃদয় দিয়া গ্রহণ করিবে তখনই তাহার সামনে হাজির হইবে কারবালা। আর তখনই দেখা যায়, আমাদের মধ্যে হাজারে ৯৯৯ জন এজিদ পক্ষ' গ্রহণ করিয়া তথা দুনিয়া সমর্থন করিয়া জীবন যাপন করিয়া যাইতেছি।
ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদাতের পূর্বে শেষবারের মতো ইয়াজিদ সৈন্যদের যে ভাষণটি দিয়েছিলেন তা শুধু ইয়াজিদ সৈন্যদের জন্যই নয় বরং কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মুসলমানদের জন্য একটি শিক্ষা হয়ে রইল। তিনি বলেছেন, তোমরা আমাকে চেন না? চেয়ে দেখ, আমি কে? আমি রাসূল (দ.)-এর প্রিয়তম দৌহিত্র, আমি খাইবার বিজয়ী শেরে খোদা, হযরত আলী (কা.)-এর ছেলে, আমি খাতুনে জান্নাত মা ফতেমাতুজ্জোহরার স্নেহের লাল। তোমরা কি নানা জানের মুখে শোন নি, আমি আমার ভাই হাসান বেহেস্তের সরদার? আমি তোমাদের কি ক্ষতি করেছি যে তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাও? আমাকে হত্যা করে তোমরা আল্লাহ এবং তার রাসূল (দ.)-কে কি জবাব দেবে? অত:পর তিনি যে কথাটি বললেন তা সত্য এবং মিথ্যাকে, মুমিন এবং মুনাফেকদের পৃথকীকরণের জন্য সমস্ত মুসলিম জনগণের কাছে শিক্ষা হয়ে রইল। তিনি বলেছিলেন, তোমরা কি আমার কথা শুনতে পাওনা? তোমাদের মধ্যে কি মুসলমানও নেই? সত্যিই সেদিন ইয়াজিদের পক্ষে একজন মুসলমানও ছিল না, ছিল সবই মুনাফেক। তিনিই হোসাইন, যার সম্পর্কে প্রিয় নবীজী (দ.) বলেছেনঃ-আল হোসাইন মিন্নি, ওয়া আনা মিনাল হোসাইন।অর্থাৎ- হোসাইন আমি রাসূল হতে আর আমি হোসাইন হতে (সুবহানআল্লাহ)
উক্ত হাদীসটির প্রথম অংশ 'হোসাইন আমি রাসূল হতে'; কথাটি বুঝা গেলো, অর্থাৎ- রাসূল (দ.)-এর পবিত্র বংশ হতে হোসাইন (রা.)। কিন্তু 'আমি হোসাইন হতে' অর্থাৎ- স্বয়ং প্রিয় নবীজি (দ.) হোসাইন হতে এ কথাটির অর্থ না বুঝলে হোসাইন (রা.)-কে বুঝা যাবে না, চেনা যাবেনা। সুতরাং প্রিয় নবী (দ.)-কে ও বুঝা যাবে না। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত উক্ত অংশটির অর্থ সঠিকভাবে জ্ঞাত হওয়া। হযরত সালমান ফারসী (রা.) বলেছেন, প্রিয় নবী (দ.) হোসাইন (রা.)-কে লক্ষ্য করে আমাদেরকে বলেছিলেন, তিনিই সৈয়্যদ, তিনিই সৈয়্যদের পুত্র, তিনিই ইমাম, তিনিই ইমামের পুত্র, তিনিই ইমামের পিতা। জমিনের বুকে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিটিকে দেখতে চাও, তাহলে হোসাইন কে দেখে নাও।
আল্লাহর রাসূল (দ.) ইমাম হোসাইন (রা.)-কে লক্ষ্য' করে আরও বলেছিলেন, 'আহাব্বাল্লাহ মান আহাব্বা হোসাইন' অর্থাৎ- যে হোসাইন (রা.)-এর সাথে মহব্বত রাখে, আল্লাহও তার সাথে মহব্বত রাখেন (সুবহানআল্লাহ)
ভারত উপমহাদেশে ইসলামের ভিত্তি স্থাপনকারী, হিন্দে ওলি, আতায়ে রাসূল, খাজা গরীবে নেওয়াজ মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.) ঘোষণা করছেনঃ-
“শাহ্ আস্ত হোসাইন, বাদশা আস্ত হোসাইন,
দ্বীন আস্ত হোসাইন, দ্বীন পানাহ্ আস্ত হোসাইন,
ছেরদাদ ওয়া না দাদ দাস্ত দার-দাস্তে ইয়াজিদ।
হাক্কাকে বেনায়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আস্ত হোসাইন (রা.)।”
“অনুবাদঃ- হোসাইন (রা.) হইলেন দ্বীনের সম্রাট এবং দুনিয়ার (রাজত্ব পরিচালনা করিবার অধিকার প্রাপ্ত যোগ্য) সম্রাট। হোসাইন (রা.) হইলেন ধর্ম। ধর্মের আশ্রয় দাতা হইলেন হোসাইন (রা.), দিলেন মাথা এবং না দিলেন হাত এজিদের হাতে। সত্য ইহাই যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ এর স্তম্ভই হইলেন হোসাইন (রা.)।
১. “মাথা দিলেন” অর্থ- জীবন দিলেন।
২. “হাত দিলেন না” অর্থ আনুগত্যের হাত বাড়াইয়া দেন নাই তথা আত্মসমর্পণ করেন নাই।
৩. নবি এবং ইমামগণের কাহারও নিকটে আশ্রয় গ্রহণ করাই ধর্মের আশ্রয়। তাঁহারা ব্যতীত আল্লাহ্র ধর্ম নাই এবং ধর্মের কোন আশ্রয়দাতাও নাই।
খাজা বাবা বলেন - বোকারা বুঝতে পারেনি , হোসাইন (রা.) পানির পিপাসায় এবং অসহায় মত মারা যাননি বরং তিনি আসল এবং নকলের ভাগটি পরিষ্কার করে দেখিয়ে গেছেন। হোসাইনের ব্যবহৃত ঘোড়ার পদধূলি বলতেও নিজেকে আমি লজ্জাবোধ করি, অথচ আমি মঈনুদ্দিন যদি সেদিন কারবালার ময়দানে একটি আঙুল দিয়েও খোঁচা দিতাম তাহলে, আল্লাহর কসম সঙ্গে সঙ্গে পানির নহর বয়ে যেত (সুবহানআল্লাহ), (সালাম ইয়া হোসাইন-রা.)
ইমাম জাফর সাদেক (রা.) বলেছেনঃ- “মুসলমানের জন্য প্রতিটি ভূমিই কারবালা আর প্রতিটি দিন হচ্ছে আশুরা।”
এ কথাটির একটি সুন্দর ব্যাখ্যা আমাকে একজন বুজুর্গ দিয়েছেন। তাঁর মতে ইমাম জাফর সাদেক (রা.)-এর কথাটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। ‘ভূমি’ বলতে এখানে মানবদেহ আর ‘প্রতিটি দিন’ বলতে প্রতিটি মুহূর্তকেই বুঝানো হয়েছে। কারবালার সেই ভয়াবহ দৃশ্যের কথা একবার মনে করুন!
আপনি নিজেই কারবালায় একজন অবরুদ্ধ, ওই সময় আপনার মানসিক অবস্থা চিন্তা করে দেখুন। একমাত্র আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত, পৃথিবীর কোন মোহ, লোভ, লালসা, হিংসা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি আপনাকে কি গ্রাস করতে পারবে? পরম করুনাময় আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি আপনার তাকওয়া ও নির্ভরশীলতায় কি কোন তুলনা হয়? এমনি অবস্থায় আপনি হবেন ধীর, স্থির, অচঞ্চল, ও অটল। আপনি হবেন সম্পূর্ণরূপে একজন ‘সেরাতুল মুস্তাকিমের’ পথিক। একটি নিঃশ্বাসও তখন আপনি আল্লাহ্র স্মরণ ব্যতীত গ্রহণ করবেন না।
প্রতিটি মুসলমানকেও তার পার্থিব জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ্র তাওয়াক্কালের মধ্যেই কাটাতে হবে। আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে, আল্লাহ্র স্মরণে, আল্লাহরই নির্দেশিত পথে মুসলমানের প্রতিটি কর্ম ও চিন্তা পরিচালিত হতে হবে। এ হচ্ছে মুসলমানদের কারবালার শিক্ষা।
তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত উক্ত অংশটির অর্থ সঠিকভাবে জ্ঞাত হওয়া।
হযরত সালমান ফারসী (রা.) বলেছেন, প্রিয় নবী (দ.) হোসাইন (রা.)-কে লক্ষ্য করে আমাদেরকে বলেছিলেন, তিনিই সৈয়্যদ, তিনিই সৈয়্যদের পুত্র, তিনিই ইমাম, তিনিই ইমামের পুত্র, তিনিই ইমামের পিতা। জমিনের বুকে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিটিকে দেখতে চাও, তাহলে হোসাইন কে দেখে নাও।
আল্লাহর রাসূল (দ.) ইমাম হোসাইন (রা.)-কে লক্ষ্য' করে আরও বলেছিলেন, 'আহাব্বাল্লাহ মান আহাব্বা হোসাইন' অর্থাৎ- যে হোসাইন (রা.)-এর সাথে মহব্বত রাখে, আল্লাহও তার সাথে মহব্বত রাখেন (সুবহানআল্লাহ)
ভারত উপমহাদেশে ইসলামের ভিত্তি স্থাপনকারী, হিন্দে ওলি, আতায়ে রাসূল, খাজা গরীবে নেওয়াজ মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.) ঘোষণা করছেনঃ-
“শাহ্ আস্ত হোসাইন, বাদশা আস্ত হোসাইন,
দ্বীন আস্ত হোসাইন, দ্বীন পানাহ্ আস্ত হোসাইন,
ছেরদাদ ওয়া না দাদ দাস্ত দার-দাস্তে ইয়াজিদ।
হাক্কাকে বেনায়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আস্ত হোসাইন (রা.)।”
“অনুবাদঃ- হোসাইন (রা.) হইলেন দ্বীনের সম্রাট এবং দুনিয়ার (রাজত্ব পরিচালনা করিবার অধিকার প্রাপ্ত যোগ্য) সম্রাট। হোসাইন (রা.) হইলেন ধর্ম। ধর্মের আশ্রয় দাতা হইলেন হোসাইন (রা.), দিলেন মাথা এবং না দিলেন হাত এজিদের হাতে। সত্য ইহাই যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ এর স্তম্ভই হইলেন হোসাইন (রা.)।
১. “মাথা দিলেন” অর্থ- জীবন দিলেন।
২. “হাত দিলেন না” অর্থ আনুগত্যের হাত বাড়াইয়া দেন নাই তথা আত্মসমর্পণ করেন নাই।
৩. নবি এবং ইমামগণের কাহারও নিকটে আশ্রয় গ্রহণ করাই ধর্মের আশ্রয়। তাঁহারা ব্যতীত আল্লাহ্র ধর্ম নাই এবং ধর্মের কোন আশ্রয়দাতাও নাই।
খাজা বাবা বলেন - বোকারা বুঝতে পারেনি , হোসাইন (রা.) পানির পিপাসায় এবং অসহায় মত মারা যাননি বরং তিনি আসল এবং নকলের ভাগটি পরিষ্কার করে দেখিয়ে গেছেন। হোসাইনের ব্যবহৃত ঘোড়ার পদধূলি বলতেও নিজেকে আমি লজ্জাবোধ করি, অথচ আমি মঈনুদ্দিন যদি সেদিন কারবালার ময়দানে একটি আঙুল দিয়েও খোঁচা দিতাম তাহলে, আল্লাহর কসম সঙ্গে সঙ্গে পানির নহর বয়ে যেত (সুবহানআল্লাহ), (সালাম ইয়া হোসাইন-রা.)
ইমাম জাফর সাদেক (রা.) বলেছেনঃ- “মুসলমানের জন্য প্রতিটি ভূমিই কারবালা আর প্রতিটি দিন হচ্ছে আশুরা।”
এ কথাটির একটি সুন্দর ব্যাখ্যা আমাকে একজন বুজুর্গ দিয়েছেন। তাঁর মতে ইমাম জাফর সাদেক (রা.)-এর কথাটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। ‘ভূমি’ বলতে এখানে মানবদেহ আর ‘প্রতিটি দিন’ বলতে প্রতিটি মুহূর্তকেই বুঝানো হয়েছে। কারবালার সেই ভয়াবহ দৃশ্যের কথা একবার মনে করুন!
আপনি নিজেই কারবালায় একজন অবরুদ্ধ, ওই সময় আপনার মানসিক অবস্থা চিন্তা করে দেখুন। একমাত্র আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত, পৃথিবীর কোন মোহ, লোভ, লালসা, হিংসা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি আপনাকে কি গ্রাস করতে পারবে? পরম করুনাময় আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি আপনার তাকওয়া ও নির্ভরশীলতায় কি কোন তুলনা হয়? এমনি অবস্থায় আপনি হবেন ধীর, স্থির, অচঞ্চল, ও অটল। আপনি হবেন সম্পূর্ণরূপে একজন ‘সেরাতুল মুস্তাকিমের’ পথিক। একটি নিঃশ্বাসও তখন আপনি আল্লাহ্র স্মরণ ব্যতীত গ্রহণ করবেন না।
প্রতিটি মুসলমানকেও তার পার্থিব জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ্র তাওয়াক্কালের মধ্যেই কাটাতে হবে। আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে, আল্লাহ্র স্মরণে, আল্লাহরই নির্দেশিত পথে মুসলমানের প্রতিটি কর্ম ও চিন্তা পরিচালিত হতে হবে। এ হচ্ছে মুসলমানদের কারবালার শিক্ষা।
1 Comments
Warning: Undefined array key "datetime" in /home/vatirrani/public_html/comments.php on line 23