শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
 
vatirrani News

প্রচ্ছদ মুক্তমঞ্চ হাওরের বোরো ফসল ঘরে তোলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিন

হাওরের বোরো ফসল ঘরে তোলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিন

নাসরুল আনোয়ার | ৬:৩৮ অপরাহ্ন, ১২ এপ্রিল, ২০২০

1586695134.jpg
নাসরুল আনোয়ার

নাসরুল আনোয়ার: খাদ্য নিরাপত্তায় হাওরের বোরো ফসল ঘরে তোলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিন। ধান কাটাতে উত্তরাঞ্চলের ক্ষেতমজুরদের বিশেষ ব্যবস্থায় হাওরে পাঠান। গ্রামে ফেরা কর্মহীন মানুষকেও কাজে লাগান...

#হাওরের #বিদ্যমান #সঙ্কটঃ

Ω খাদ্য উদ্বৃত্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা হাওরের সাত জেলা সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের প্রধান এবং বছরে একমাত্র উৎপাদিত ফসল বোরো ধান।

Ω বাংলাদেশে এবার মোট ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৮ হেক্টর আবাদ করা জমির মধ্যে সাত জেলায় মোট জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে নয় লাখ ৩৬ হাজার ১০১ হেক্টর অর্থাৎ প্রায় ২৩ শতাংশ। (তথ্য ডিএই’র।)

Ω বাংলাদেশের মোট চাহিদার পাঁচ ভাগের এক ভাগ খাদ্যের (ধান) যোগান আসে হাওর থেকে।

Ω কয়েকবছর ধরে অকাল বন্যায় ফসল মার খেতে খেতে হাওরের কৃষকদের একটি বড় অংশ এমনিতেই আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে। তার ওপর ধান কাটার সময় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান না কেনায় কমদামে ধান বেচে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বঃস্বান্ত হয়ে বোরো চাষ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে হাওরের মোট আবাদি জমির একটি বড় অংশই পাঁচ-ছয় বছর ধরে পতিত থাকছে।

Ω তারপরও চাষাবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে কয়েকবছর ধরে ফসল কাটার মৌসুমে মৌসুমি ক্ষেতমজুর তথা ধানকাটা শ্রমিকরা হাওরে আসা কমিয়ে দিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যের কারণে হাওরের সাত জেলাজুড়ে একই সময়ে ফসল পাকে। বহুকাল ধরে তাই উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার ধানকাটা শ্রমিক হাওরে আসত।Ω করোনার এ পরিস্থিতিতে উত্তরাঞ্চলের ক্ষেতমজুরদের হাওরে আসবার সম্ভাবনা শূন্যের কোটায়। যে কারণে এবার সোনার ফসল ঘরে তোলা প্রায় অসম্ভব ঠেকছে।

Ω অবশ্য কৃষি বিভাগ বিদ্যমান সঙ্কট অনুধাবন করে ফসল কাটবার জন্য নতুন করে ১৮০টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, ও ১৩৭টি রিপার বরাদ্দ দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, হাওরের সাত জেলায় আরো ৩৬২টি হার্ভেস্টার ও এক হাজার ৫৬টি রিপার সচল রয়েছে। এছাড়া পুরাতন আরো ২২০টি হার্ভেস্টার ও ৪৮৭টি রিপার মেরামত করা হচ্ছে।

কৃষকরা ও হাওরের সুধীজনেরা পুরাতন মেশিন মেরামতের বিষয়টি গ্রাহ্য না করে বলছেন, প্রায় সাড়ে নয় লাখ হেক্টর জমির ফসল কাটা-মাড়াইয়ের জন্য এ মেশিন অত্যন্ত অপ্রতুল। দরকার পর্যাপ্ত ধানকাটা শ্রমিকের।

#চলমান #সঙ্কট #নিরসনে #প্রস্তাবনাঃ

Ω কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, রিপারসহ অন্যান্য ফসল কাটা যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে কৃষি শ্রমিকদের হাওরে আনবার আয়োজন করতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Ω উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল উপজেলায় বার্তা পাঠিয়ে শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এরপর বিশেষ ব্যবস্থায় প্রতিটি জেলা থেকে সেসব শ্রমিককে হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে হবে। অবশ্যই করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের পাঠাতে হবে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

Ω দেশের সবচাইতে বড় ইনফর্মাল সেক্টরও কার্যত ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় কর্মহীন অটোচালক ও দিনমজুরদের পাশপাশি ঢাকাফেরত রিকশাশ্রমিক, ফেরিওয়ালা, সবজি-মাছ-চা বিক্রেতা, পুরুষ গার্মেন্টসকর্মী ও স্বনিয়োজিত কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে ধান কাটার কাজে লাগানোর মহাপরিকল্পনা করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে হাওরের জেলা-উপজেলা প্রশাসন ধান কাটায় এদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

Ω ফসল কাটার সময়ে ধানের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে ফিরে আসা ও দেশের বাইরে অবস্থানকারী রেমিটেন্সযোদ্ধা এবং গার্মেন্টস সেক্টর মন্দার কবলে পড়তে চলেছে। এমন বাস্তবতায় ধান ও চাল ক্রয়ে চিরাচরিত রীতি অনুসরণ করা হলে কৃষক সমূলে ধ্বংস হবে এবং দেশে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে।

(আমার এ লিখিত প্রস্তাবনা কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মো. আফজাল হোসেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের হাতে শনিবার পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালক একই প্রস্তাবনা তাঁর মহাপরিচালকের কাছে হস্তান্তর করেছেন। দেখি কী হয়!)

ধন্যবাদসহ...

নাসরুল আনোয়ার

সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী

Post Your Comment

সম্পাদক: গোলাম রসূল, উপদেষ্টা সম্পাদক: কুদ্দুস আফ্রাদ ও ইব্রাহিম খলিল খোকন, নির্বাহী সম্পাদক: এস. এম. ফরহাদ
বার্তাকক্ষ: 01911214995, E-mail: info@vatirrani.com
Developed by CHAHIDA.COM