শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
 
vatirrani News

প্রচ্ছদ মুক্তমঞ্চ করোনা ভাইরাসঃ ভীতি নয়, চাই সচেতনতা

করোনা ভাইরাসঃ ভীতি নয়, চাই সচেতনতা

মোহাম্মদ আবুল হাসনাত | ১১:১১ পূর্বাহ্ন, ২৯ মার্চ, ২০২০

1585458715.jpg
মোহাম্মদ আবুল হাসনাত

৫০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়াতে চাকা আবিষ্কারের পর, সেই চাকাই হয়ে উঠেছিল সভ্যতার গতির নিদর্শন। হাজার হাজার বছর সভ্যতার চাকা ঘুরছিল অবিরাম আর আমরা মানবজাতি সভ্য থেকে সভ্যতর হচ্ছিলাম। কিন্তু এই যাত্রা বাস্তবিক অর্থেই খুব একটা সহজ ছিল না। নানা সময়ে নানা ধরণের মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক বিপত্তি যেমন মহামারী কাটিয়ে উঠে মানব সভ্যতা আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে।

অতীতের অনেক মহামারীর মত আজকের করোনা ভাইরাসের সংক্রমনও একটি মহামারী যা আজ পুরো বিশ্বকে অচল করে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সভ্যতার চাকাই থামিয়ে দিয়েছে।

করোনা ভাইরাস এমন এক ভাইরাস যার প্রতিটি নতুন প্রজন্ম আগের প্রজন্মের চেয়ে গাঠনিক দিক থেকে আলাদা, তাই এর বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিষেধক বানানোটাও বিজ্ঞানীদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় আর তাই এখন পর্যন্ত এর কোন ঔষধও তৈরী হয় নাই।

গত ডিসেম্বরে চীনে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হলেও আজ তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসে একব্যাক্তি সংক্রমিত হলে তার মাধ্যমে আরো অন্তত ৩ জন সংক্রমিত হয়, ওই ৩ জনের মাধ্যমে আরো নতুন ৯ জন, পরে ওই ৯ জনের মাধ্যমে নতুন ২৭ জন, এভাবে চলতেই থাকে। এজন্য খোদ আমেরিকার মত উন্নত দেশও এই ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে পারে নি। কিছু দিনের মধ্যেই ১ জন, ৩ জন, ৯ জন করে আজ লক্ষাধিক মানুষ সংক্রমিত সেখানে। মৃত্যুর মিছিল বড়ছে তো বাড়ছেই। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স আজ তাদের নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে বয়ঃবৃদ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবা সংকোচন করেছে! মৃতব্যাক্তিদের সৎকারের যে সাধারন নিয়ম তা ও অনেক ক্ষেত্রে না মানতে বাধ্য হচ্ছে তাদের স্বজনেরা! সমস্ত মানুষ আজ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী! আমাদের বাংলাদেশেও সংক্রমন বেড়েই চলছে! এমনই এক ভয়াবহতা চলছে পৃথিবীজুড়ে! কতদিন এমনটা চলবে আমরা কেউ তা জানি না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যদি পৃথিবীবাসী এই মহামারী ঠেকাতে ব্যর্থ হয় তবে কয়েক কোটি মানুষের প্রাণহানী হবে বলে সতর্ক করেছে। তবে কিছু বিষয় যেমনঃ জনসমাগম এড়িয়ে চলা, হাঁচি বা কাঁশি দেয়ার ক্ষেত্রে শিষ্টাচার মেনে চলা, যথাসম্ভব গণপরিবহণ ব্যবহার না করা, নিজেকে গৃহে আবদ্ধ করা, অতিপ্রয়োজনে বাহিরে যেতে হলেও মাস্ক ব্যবহার করা ইত্যাদি বিষয় অর্থাৎ সরকারী নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে। এতে করে সংক্রমনের হার কমানো যেতে পারে বলে তাদের অভিমত। এসব বিষয় মাথায় রেখে সব ধর্মের উপাসনালয়েও গণজমায়েত না করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রত্যেক ধর্মের পন্ডিত ব্যক্তিরা। এমনকি মুসলমানদের মক্কা ও মদিনায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববিতে ও গণজমায়েত করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

"যদি তোমরা শুনতে পাও যে, কোনো জনপদে প্লেগ বা অনুরূপ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তবে তোমরা তথায় গমন করবে না। আর যদি তোমরা যে জনপদে অবস্থান করছ তথায় তার প্রাদুর্ভাব ঘটে তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।" (বুখারী, আস-সহীহ ৫/২১৬৩; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৩৮, ১৭৩৯)

এভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) প্রায় দেড় হাজার বৎসর পূর্বে সংক্রমন প্রতিরোধে বিচ্ছিন্নকরণ (quarantine) ব্যবস্থার নির্দেশনা প্রদান করেন।

তাই যারা শুধু বিশ্বাস করেন যে হায়াৎ-মউৎ আল্লাহর হাতে, তাদের এ ও বিশ্বাস করা উচিৎ যে আল্লাহ চাইলে আমাদের হায়াৎ বৃদ্ধি বা হ্রাস করতে পারেন। আমরা যদি এই মহামারীর সময়ে সচেতন না হই তা হলে আল্লাহ হয়তো আমাদের হায়াৎ কমিয়েও দিতে পারেন । সৃষ্টিকর্তা আমাদের আরো সচেতন হওয়ার তৌফিক দান করুন ও হায়াৎ বৃদ্ধি করুন।

তাই আজ এই বৈশ্বিক ক্রান্তিলগ্নে আমরা নিজেরা ভীত নয় বরং সচেতনভাবে গৃহে অবস্থানের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারি।

আশারাখি যে, বিশ্ববাসী অতীতে যেমনকরে প্লেগ, গুটিবসন্ত, কলেরা ইত্যাদি অনেক মহামারির বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছে, তেমনি করোনার বিরুদ্ধেও জয়ী হবে। আবার ঘুরবে সভ্যতার চাকা অবিরত, পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটবে মানুষ, মানুষের জন্য।

লেখক-সহকারী অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

1 Comments


Warning: Undefined array key "datetime" in /home/vatirrani/public_html/comments.php on line 23
Md Nurul Islam Anik
৬:০০ পূর্বাহ্ন, ১ জানুয়ারী, ১৯৭০
গঠন মৃলক আলোচনা

Post Your Comment

সম্পাদক: গোলাম রসূল, উপদেষ্টা সম্পাদক: কুদ্দুস আফ্রাদ ও ইব্রাহিম খলিল খোকন, নির্বাহী সম্পাদক: এস. এম. ফরহাদ
বার্তাকক্ষ: 01911214995, E-mail: info@vatirrani.com
Developed by CHAHIDA.COM