শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
 
vatirrani News

প্রচ্ছদ মুক্তমঞ্চ স্কুল ম্যানেজিং কমিটি: শিক্ষিত বনাম অশিক্ষিত

স্কুল ম্যানেজিং কমিটি: শিক্ষিত বনাম অশিক্ষিত

গোলাম রসূল | ২:৩৩ অপরাহ্ন, ২৯ জুন, ২০১৯

1561797229.jpg
গোলাম রসূল

গোলাম রসূল: সম্প্রতি ভাটির রানি খ্যাত কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের প্রায় সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছে। বিদ্যালয় থাকলে সেটি পরিচালনার জন্য কমিটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অষ্টগ্রামে এই পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ভাটির রানি আমার ভাললাগা, ভালবাসা ও স্বপ্নের ঠিকানা। সুতরাং, বহুল আলোচিত পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে আজকে আমাকে দুটি কথা বলতেই হচ্ছে।

অষ্টগ্রামে এবার যেটি হয়েছে প্রতিটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী বানানো হয়েছে দলীয় পরিচয়ে। যাদের বেশিরভাগ আবার অল্প শিক্ষিত অথবা অশিক্ষিত। আবার মজার বিষয় হল তারা আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্ত:কোন্দলে জর্জরিত দুটি উপদলের। এর একটি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এর সমর্থনপুষ্ট এবং অপরটি সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারী। যেহেতু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের পরে। স্পষ্টতই এর প্রভাব পড়েছে কমিটি গঠনে। ফেসবুকের পোস্টদাতা সবাই অভিযোগ করেছেন সাবেক ও বর্তমান দুই চেয়ারম্যান ও তাদের গ্রুপ চেয়েছে তাদের পক্ষে নির্বাচনে যারা কাজ করেছে তাদেরকেই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী বানানোর। হয়েছেও তাই। এই দুটি গ্রুপের অসুস্থ্য প্রতিযোগিতার ফসল প্রায় সকল বিদ্যালয়ে অযোগ্য ও অশিক্ষিত ব্যক্তিগণের মাধ্যমে পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু অষ্টগ্রামের সচেতন সমাজ বিশেষ করে তরুন ছাত্র সমাজ বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি। তারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তাদের লেখনির মাধ্যমে। ফেসবুকে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমস সাহেবও এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। তাদের সবার বক্তব্যের সুর এক। এসব কমিটি বিদ্যালয়ের উন্নয়ন নয় বরং শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করবে। আর তাই তাদের চাওয়া-রাজনীতির অপছায়া থেকে অষ্টগ্রামের বিদ্যালয়গুলোকে রক্ষা করতে হবে। ভবিষ্যতে অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত নয়, শুধুমাত্র সুশিক্ষিত মানুষদের মাধ্যমে ভাটির রানির প্রতিটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে। 

আমার মতামত: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বর্তমানে আমাদের উপজেলায় প্রচুর শিক্ষিত মানুষ রয়েছেন। প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে উচ্চশিক্ষিত মানুষ। তাদেরকে নিয়েই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে। তবে কোন এলাকায় যদি সেরকম কাউকে না পাওয়া যায় অথবা কোন অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত ব্যক্তি তার জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সঠিকভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করার স্বক্ষমতা রাখে তাদেরকে দিয়েও কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সমাজে ভালমানুষ হিসেবে স্বীকৃত মানুষরাই যেন কমিটিতে থাকেন। উনারা রাজনীতি করলেও সমস্যা নেই। ভালমানুষ সবজায়গাতেই ভাল। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত এই দুই শ্রেণির মাঝেই ভালমানুষ বিদ্যমান। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন করার জন্য এই দুই শ্রেণি থেকেই শুধুমাত্র ভালমানুষ ও সত্যিকারের বিদ্যানুরাগীদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। 

দুটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:

এক: আমার নিজ গ্রামের পাওন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে আমার বেশ ভাল সম্পর্ক। সে সূত্র ধরেই বিদ্যালয়ের সার্বিক খোঁজখবর নেয়া। এক পর্যায়ে জানতে পারলাম স্কুলটির বেহাল দশা। এর উন্নয়নে তিনি আমার সহায়তা চাইলেন। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাংসদ মহোদয়ের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। উনারা বিষয়টি আমলে নেন। একদিন আমি প্রধান শিক্ষক সাহেবকে বললাম- “এক কাজ করেন আমাকে আপনার বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিতে নিয়ে নেন। তাহলে আমি সরাসরি এর পক্ষে আরো কাজ করতে পারবো।” তিনি পরম খুশি হয়ে আমাকে স্বাগত জানালেন। তিনি এ বিষয়ে আমার নাম প্রস্তাব করবেন বলে জানালেন। সেজন্য আমাকে কি করতে হবে তাও বলে দিলেন। আমি বললাম, “আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই আমার কাজ হবে।” এরপর নিয়মিত যোগাযোগ চলতে থাকে। একদিন শুনলাম পাওন স্কুলের কমিটি হয়ে গেছে। কাদের নিয়ে সে কমিটি গঠিত হয়েছে প্রধান শিক্ষক মহোদয় খুব ভালো বলতে পারবেন। নিশ্চয়ই উনারা আমার চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য। আর সেকারণেই তিনি আমার নাম বাদ দিয়ে তাদের নাম প্রস্তাব করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি উনাকে কিছু বলব সে ইচ্ছেটা হয়নি। জাতির বিবেকদের আমি আবার খুব সম্মান করি।

দুই: অভিভাবক নির্বাচনের মাধ্যমে হক সাহেব উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছে সম্প্রতি। এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জানলাম সে কমিটিতে একজন কো-অপ সদস্য (আগে বলা হত বিদ্যোৎসাহী) মনোনয়ন দিবে। আমি এই বিদ্যালয়ের শুরুর দিকের একজন সাবেক ছাত্র। ভাবলাম এখন সময় এসেছে এর উন্নয়নে নিজেকে কাজে লাগানোর। ফোন করলাম প্রধান শিক্ষক হাবীবুর রহমান স্যারকে। ছাত্রাবস্থায় উনার কঠোর শাসন আমি আজো ভুলতে পারি না। আমার আগ্রহের কথা জেনে স্যার বললেন-“তুমি কো-অপ সদস্য হলেত খুবই ভাল হয়। বিদ্যালয় পরিচালনায়-ছাত্র-শিক্ষক বিষয়টি আমার জন্য অনেক আনন্দের ও গর্বের।” কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী নাকি স্যার আমার নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না। তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন যারা অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সাথে কথা বলতে। আমি যা বুঝার বুঝে গেলাম। মন খারাপ করে ফোন রাখলাম। আমি চাইনি তবুও মনের সাথে যুদ্ধ করে শেষে একজন অভিভাবক প্রতিনিধির সাথে কথা বললাম। তিনি আমাকে জানালেন ঐ দিনেই নাকি কো-অপ সদস্য নেয়ার মিটিং এবং তিনি একজনকে কথা দিয়ে রেখেছেন ঐ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন বলে। আমি আর মাত্র তিনটা দিন আগে ফোন করলে তিনি আমার নাম প্রস্তাব করতে পারতেন। আমি উনার কথায় খুব খুশি হয়ে বললাম ধন্যবাদ ভাই। (ঐ ভাই তখন উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে কো-অপ সদস্য বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন)। আর কাউকে ফোন দিতে ইচ্ছে হলনা। পরে জানতে পারলাম তুমুল গ্রুপিংয়ের কারণে ঐ দিন কো-অপ সদস্য মনোনয়ন দেয়া হয়নি। বিষয়টি এখনো ঝুলন্ত অবস্থাই রয়েছে। অথচ প্রধান শিক্ষক স্যার যদি নিজে অথবা কোন অভিভাবক প্রতিনিধির মাধ্যমে আমার নাম প্রস্তাব করাতেন আমি বিশ্বাস করি উপস্থিত সকলেই সেটি সমর্থন করতেন। তবে আমি আশাবাদী পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে তিনি আমার নামটি প্রস্তাবনায় আনবেন। 

শেষ কথা: অশিক্ষিত বা শিক্ষিত নয় প্রয়োজন সঠিক ও যোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিসমূহ গঠন করা। আর অবশ্যই আমাদের শিক্ষকগণকে স্থানীয় রাজনীতি পরিহার করে শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে হবে। আমি দেখেছি বর্তমানে শিক্ষকগণ একজন ভালো শিক্ষক হওয়ার চেষ্টা না করে একজন ভালো রাজনীতিবীদ হতে মরিয়া। উনাদের কেউ কেউ আবার স্থানীয় রাজনীতিবীদদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কোনরকমে দিন পার করার ধান্ধ্যা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বিদ্যালয়গুলো একদিন গরু-ছাগলের আশ্রয়ঘর হবে। সুতরাং সাবধান। এখনই সময় একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে একটি আদর্শ সমাজ উপহার দেয়ার। সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। 

লেখক: সাংবাদিক ও হাওর উন্নয়নকর্মী।

1 Comments


Warning: Undefined array key "datetime" in /home/vatirrani/public_html/comments.php on line 23
Md Nurul Islam Anik
৬:০০ পূর্বাহ্ন, ১ জানুয়ারী, ১৯৭০
ভালো লোকের দাম একটু কম হয় যাই হোক একদিন সুফল আসবে।

Post Your Comment

সম্পাদক: গোলাম রসূল, উপদেষ্টা সম্পাদক: কুদ্দুস আফ্রাদ ও ইব্রাহিম খলিল খোকন, নির্বাহী সম্পাদক: এস. এম. ফরহাদ
বার্তাকক্ষ: 01911214995, E-mail: info@vatirrani.com
Developed by CHAHIDA.COM