শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
 
vatirrani News

প্রচ্ছদ মেধাবী মুখ হক সাহেব স্কুলে মানবিকে প্রথম জিপিএ–৫ এনে দিল কৃষিশ্রমিক শিক্ষার্থী

হক সাহেব স্কুলে মানবিকে প্রথম জিপিএ–৫ এনে দিল কৃষিশ্রমিক শিক্ষার্থী

নিউজ ডেস্ক | ৭:৩৯ অপরাহ্ন, ১ জুন, ২০২০

1591018779.jpg

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের হক সাহেব উচ্চবিদ্যালয়। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এই সময়ে মানবিক শাখা থেকে কেউ জিপিএ–৫ বা সমমানের ফলাফল পায়নি। অবশেষে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সেই আক্ষেপ ঘুচেছে। মানবিক থেকে জিপিএ–৫ পাওয়ার গৌরব এসেছে রিয়াদ হাসান শেখ নামে এক শিক্ষার্থীর হাত ধরে।

অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান রিয়াদ একজন কৃষিশ্রমিক। নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে অন্যের জমিতে কাজ করে। এসএসসির ফরম পূরণের টাকা জোগাড় করতে মানুষের সহযোগিতা নিতে হয়েছে। কঠোর পরিশ্রমের পর ভালো ফল পাওয়া এই শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চায়।

হক সাহেব বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষকতা করছেন হাবিবুর রহমান চৌধুরী। প্রধান শিক্ষক হিসেবে আছেন ১৯৯৮ সালের জুন মাস থেকে। তিনি বলেন, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ–৫ থাকলেও মানবিক থেকে এত দিন সাফল্য ছিল না। রিয়াদ সাফল্যটি এনে দিয়েছে। পরবর্তী সাফল্য পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হবে না বলে আশা তাঁর।

স্কুলটির অবস্থান উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের সাবিয়ানগর গ্রামে। রিয়াদের বাড়ি একই ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামে। এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৫২। এর মধ্যে বিজ্ঞান থেকে ২০ জন, ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ১৪ এবং মানবিক থেকে অংশ নেয় ১১৮ জন। বিজ্ঞান থেকে জিপিএ–৫ পায় দুজন। পাসের হার ৯০ দশমিক ১৩ শতাংশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিয়াদ হাসানের শিক্ষাজীবন খুবই ধূসর। তারা পাঁচ ভাইবোন। রিয়াদ সবার ছোট। বাবা হেদায়েত উল্লাহ শেখ বেকার। হাওরে এতটুকু কৃষি জমি নেই। মা রাজিয়া খাতুন গৃহিণী। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই সারোয়ার আলম নিজের চেষ্টায় কুমিল্লার একটি কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ছে। আরেক ভাই ফুয়াদ হাসান মাদ্রাসাছাত্র। সেও নিজের খরচ নিজে জোগায়। বোন মাহাবুবা আক্তার অষ্টগ্রাম রোটারি ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। মাহাবুবা পড়ার ব্যয় জোগাচ্ছে ছাত্র পড়িয়ে।

পড়াশোনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রিয়াদ হাসান জানায়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি ছিল। এক টেবিলে তিন ভাইবোনের পড়তে হয়। বছরের বেশির ভাগ সময় কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে। কাজের জন্য সব সময় ক্লাস করতে পারত না। আয়ের টাকা দিয়ে পড়াশোনার ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি সংসার খরচেও তার অংশগ্রহণ রয়েছে।

রিয়াদ হাসানের ভালো ফলের পেছনে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা রয়েছে একই গ্রামের বোরহান উদ্দিন শেখ নামে এক যুবকের। বোরহান জানান, অন্য এলাকার দারিদ্র্যের সঙ্গে হাওরের দারিদ্র্যের পার্থক্য রয়েছে। হাওরের দরিদ্র মানে ঘরে একমুঠো ভাত না থাকা। রিয়াদের শিক্ষাজীবন সেই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

ছেলের সাফল্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মা রাজিয়া খাতুন। কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, ‘পরীক্ষার সময় পুতেরে (ছেলে) ভালামন্দ খাওন দিতে পারি নাই। খাইয়া না–খাইয়া পরীক্ষা দিছে। পরীক্ষার আগেও কামে (কৃষি শ্রমিক) গেছে।’

সূত্র: প্রথম আলো 

Post Your Comment

সম্পাদক: গোলাম রসূল, উপদেষ্টা সম্পাদক: কুদ্দুস আফ্রাদ ও ইব্রাহিম খলিল খোকন, নির্বাহী সম্পাদক: এস. এম. ফরহাদ
বার্তাকক্ষ: 01911214995, E-mail: info@vatirrani.com
Developed by CHAHIDA.COM