প্রচ্ছদ সাহিত্য ও সংস্কৃতি মন্নাফ শাহ’র ওরশে মিষ্টি অবিক্রিত থাকে না
মন্নাফ শাহ’র ওরশে মিষ্টি অবিক্রিত থাকে না
মনোয়ার হোসেন পুলক | ৯:৩৪ অপরাহ্ন, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
মন্নাফ শাহ’র মাজার
বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ গ্রামীণ মেলা। বিভিন্ন পালা পার্বণকে কেন্দ্র করে বছরজুড়ে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি ছোট বড় গ্রামীণ মেলা বসে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। এসব মেলা আবহমান বাংলার লোকজ সংস্কৃতি বিকাশের মাধ্যমে কুসংস্কার ও জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে সহায়তা করে।
বাংলা পহেলা ফাল্গুন এমনি এক মেলা বসে কিশোরগঞ্জের হাওড় বেষ্টিত অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের সাভিয়ানগরে। বসন্তের আগমনী দিনে এ মেলা আশেপাশের অঞ্চলের অধিবাসীদের মনে দখিনা বাতাস দোলা দিয়ে যায়। ছেলে বুড়ো সবার মাঝে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। একদিন আগে থেকেই সাভিয়ানগর বাজার ও গ্রাম সংলগ্ন বিস্তৃত এলাকায় দেশের দূর দূরান্ত থেকে আগত দোকানিরা নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে।আশেপাশের আঠার-বিশ গ্রামের কর্মসূত্রে দেশের নানা প্রান্তে বসবাসরত ব্যক্তিরা এ মেলা উপলক্ষে ছুটি নিয়ে এলাকায় চলে আসে। এলাকার মেয়েরাও শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি নাইওর আসে। ছোট ছেলে-মেয়েরা মাটি ও প্লাষ্টিকের ব্যাংকে মেলার জন্য টাকা পয়সা জমায়। এ মেলা হিন্দু-মুসলিম, ধনী-গরীব সবার মিলন মেলায় পরিণত হয়। ফকির সাধক বাবা মন্নাফ শাহ(রঃ)-র ওরশ উপলক্ষে ৪৭ বছর ধরে বছর ধরে এ মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে।
মূলত মন্নাফ শাহ (রঃ)-র দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত ভক্তবৃন্দই এ ওরশ ও মেলার প্রাণ। তারা আধ্যাত্বিক গানের আসর ও দোয়া মাহফিলে মুখরিত করে রাখেন মাযার তৎসংলগ্ন এলাকা।দেশের বরেণ্য বাউল শিল্পীদের পরিবেশনায় মাতোয়ারা হয় এলাকার ওলীপ্রেমী ভক্তরা।
জনশ্রুতি আছে ও লেখকও সরেজমিনে দেখতে পান, এ মেলায় সব মিষ্টির দোকানে যত মিষ্টিই বানানো হোক কোন মিষ্টিই অবিক্রিত থাকেনা। যা একটি অলৌকিক ঘটনা।
জানা যায়, ফকির মন্নাফ শাহ(রঃ) বাহাদুরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। একপর্যায়ে সংসারবিবাগী হয়ে চাতলপাড়,বাঙ্গালপাড়া ঘুরে সাভিয়ানগর বাজারে আসেন। এখানেই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি (১৩৭৭ বঙ্গাব্দের পহেলা ফাল্গুন) এ মহান সাধকের দেহান্তর ঘটে। সেই থেকে উনার প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম তারিখে এ ওরশ ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।