বৃহঃস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪
 
vatirrani News

অবলা

খাইরুল ইসলাম | ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

1517722414.jpg
খাইরুল ইসলাম

নারীদের নিয়ে কিছু একটা লিখব বলে অনেকদিন ধরে ভাবছি। তাই আজ হঠাৎ করে লিখতে বসলাম কিছু একটা লিখব বলে। লেখাটা পড়ে অনেকের খারাপ লাগতে পারে, সেজন্য আগে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

আর প্রসঙ্গক্রমে আমি একটা কথা বলে নিই, আমি নারীবাদীও না আবার নারী বিদ্বেষী ও না। আমি একজন নারীকে মানুষের মতোই দেখি, পুরুষ বা নারী হিসেবে নয়। তাই এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমাকে মানবতাবাদীই বলতে পারেন।

"অবলা" নারী শব্দের একটি সমার্থক শব্দ। এই শব্দটি থেকেই অনুমান করা যায় আমাদের পুরুষাসিত সমাজ নারীকে কত অবজ্ঞার পাত্র হিসেবে দেখে। শুধু আমাদের সমাজই না,বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে নারীকে এভাবে পুরুষ অবজ্ঞার পাত্র বানিয়ে রেখেছে। কোথাও নারীদেরকে দমিয়ে রেখে শোষণ করা হচ্ছে আবার কোথাও নারীদের সমান অধিকারের কথা বলে ঘর থেকে বের করে এনে লাঞ্চিত করা হচ্ছে। "অবলা" শব্দটি যেহেতু নারীদের বিশেষ অবজ্ঞার পাত্র বানানোর জন্য ব্যবহার করা হয় সেহেতু নারী শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহারের পক্ষপাতী আমি নই। তবু নারীদের বর্তমান অবস্হা তুলে ধরতে আমাকে শিরোনামে এই শব্দটিই ব্যবহার করতে হয়েছে।

নারীদের এই সম্মানহানি বা হাতের পুতুল বিশেষ হওয়ার পেছনে আমি বলব নারীদের অবদানই বেশি I পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে আজ অবধি নারী জাতি লোভনীয় ভোগ্য পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদের কে কখনোই একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষের সম্মান টুকু দেওয়া হচ্ছেনা।আর এর পেছনে সবচেয়ে সক্রিয় কারণ নারীদের প্রভুত্ব স্বীকারের মানসিকতা, অযৌক্তিক অনুকরণপ্রিয়তা,অলসতা আর আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা।

আমাদের নারী সমাজ খুব সহজেই পুরুষের কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেয়।ফলে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পর্যন্ত তারা আদায় করে নিতে পারেনা। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় লক্ষ্য করলে দেখা যায় একজন নারী সারাদিন ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকে, পরিবারের সকলের দেখাশুনা করে,পরিবার চালানোর মূল পরিকল্পনায় ও থাকে। এমনকি কোন কোন পরিবারের পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করে।তবু তার এই শ্রমকে শ্রম বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়না।আবার টাকার জন্য স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত ও হয়ে থাকে। তবু সে পুরুষের পায়ে ভক্তি করে থাকে।তার প্রভুত্ব স্বীকার করে বার বার বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়। এর ফলে সে প্রতিবাদ করার শক্তি চিরতরে হারিয়ে ফেলে এবং ভবিষ্যতেও একইভাবে নির্যাতনের শিকার হয়।

নারীরা আজকাল নিজেদের ভোগ্যপণ্যের মতোই উপস্হাপন করতে শিখেছে। তাই যৌন কামনার উদ্রেগ করে এমন পোশাক আশাকের দিকেই তারা বেশি ঝুকছে। কিছু নোংরা মানসিকতার লোক এর পেছনে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।প্রমাণ স্বরুপ আমাদের বর্তমান চলচিত্র এবং বিজ্ঞাপন গুলোর দিকে নজর দিলে বুঝা যাবে নারীদের পোশাক কিভাবে ছোট করা হচ্ছে। কিন্তু দু:খের বিষয় হলেও সত্য যে পুরুষের পোশাক আগের মতই আছে।আজকাল বিজ্ঞাপন দেওয়া লাগবে?সুন্দর নারী চায়,কোন গুণ লাগবে না,রিসেপশনিস্ট লাগবে সুন্দর নারী চায়,কোন গাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিবেন? একটা সুন্দর নারী গাড়ি সামনে দাড় করিয়ে দিন,গাড়ি বিক্রির হিড়িক পড়ে যাবে। আর ক্রিকেট খেলার মাঠে ব্রা প্যান্টি পড়া মেয়েদের নাচ না দেখালে তো দর্শকই জমে না।

আমাদের মডার্ন মেয়েরা অতিরিক্ত স্টাইলিশ হতে গিয়ে শীতের মধ্যেও এসব পাতলা পোশাক পরিধান করে। ফলে যে পোশাক ছিল শরীরের নিরাপত্তার জন্য তা আর সে কাজে লাগছে না। আবার কিছু গোষ্ঠী আছে যারা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করে। তারা পুরুষের কিছু বাজে অভ্যাশ নিজেদের মধ্যে আয়ত্ব করে মডার্ন সাজতে চায়। তাদের প্রগতি শুধু পোশাক ছোট করাতে আর নোংরামির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমাদের অতি মেয়েরা সে বোধ টুকু হারিয়ে ফেলেছে।তারা আধুনিকতা দেখাতে গিয়ে প্রাচীন কালের পোশাক পরিধানে ব্যস্ত হচ্ছে। যা পাগলামির সমতুল্য, তখনকার সময়ে ভাল পোশাক তৈরী করা যেত না তাই কোন রকম পোশাক পড়ে লজ্জা স্হান ঢাকত।তাই বলে কি আধুনিক যুগের মেয়েরাও! ফলে তারা আধুনিকতার নামে নিজেদের স্বকিয়তা নষ্ট করে ফেলছে। যা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এবং সংস্কৃতির জন্য হুমকি স্বরুপ।

এর ফলে যে বিষয়টি বিশ্ব বিবেক নাড়া দিচ্ছে তা হলো ধর্ষণ, গুম, হত্যা। আমাদের সৌভাগ্যের বিষয় যে শীর্ষ দশ ধর্ষণকারী দেশের তালিকায় আমরা নেই। কিন্তু চাঞ্চল্যকর তথ্য এই যে প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ ধর্ষনের ঘটনা ঘটছে এবং হাজারে একজনের ঘটনা মিডিয়াতে প্রকাশ পাচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের অবস্হা তো আরো করুণ। বিশ্বের শীর্ষ ধর্ষণকারী দেশের তালিকায় তারা চার নম্বরে আছে। সে দেশে ধর্ষণের শিকার হওয়া ৯৮ শতাংশ নারীই আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবন বলিদান দিয়ে থাকে। প্রেমের নাম দিয়ে মেয়েদের ধর্ষণ করে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় লিপ্ত পুরুষেরা কোন কোন সময় শিক্ষক,নিকটাত্মীয় আবার খুব কাছের বন্ধুও হয়ে থাকে।কিন্তু দুঃখের বিষয় কোন ভিডিওতেই পুরুষ রূপী ধর্ষকের মুখ দেখানো হয় না।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশের প্রায় দশ পুরুষ কোন না কোন সময় ইচ্ছার বিরোদ্ধে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে এবং তা স্বীকারও করেছে।সামাজিক বিবেচনায় হয়তো আরো ২০ শতাংশ তাদের তথ্য গোপন রেখেছে।আর জোড় করে স্ত্রীদের সাথে পায়ু পথে সঙ্গম তো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।নারীদের এ অবস্হার জন্য দায়ী কারা?নারী?পুরুষেরা?না কি অন্য কিছু।

হ্যা, এক্ষেত্রে আমি বলব নারীদের অবদানই বেশি,তারপরে আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব,তার পরে পুরুষের পশুত্ব। এর পেছনে আমি অবশ্য অন্য একটি কারণ দায়ী বলে মনে করি তাহর নৈতিক অবক্ষয়। আমাদের বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক নামের যেসব যৌনকর্মী আছে তাদের জন্যই দেশে আজ এরূপ পরিস্হিতি সৃষ্টি হয়েছে।তাদের আদিম বাসনা থেকে মেয়ে তুল্য ছাত্রীরাও রেহাই পায় না!

যে শিক্ষক একটি ছাত্রের আদর্শ,যার অনুকরণে একটা জাতির ভবিষ্যৎ চরিত্র গঠিত হবে সেই শিক্ষক যদি এমন নরপশু হয় তাহলে এমন ঘটনা ঘটবেই।শিক্ষকদের মানসিকতা অনুযায়ীই ছাত্রদের মানসিকতা গড়ে উঠেছে।তাই আজকাল ছেলেমেয়েরা লাইফ এনজয় বলতে একাধিক বান্ধবির সাথে ঘুরাঘুরি বা তাদের সাথে কোন রকম সম্পর্ক স্হাপনকেই বুঝে থাকে।

কিছুদিন আগে পরীক্ষা মূলকভাবে আমি দুইটা গ্রুপে দুইটা আইডি থেকে দুইটা পোস্ট করেছিলাম।একটা আইডি ছিল ফেইক আইডি (মেয়েদের) অন্যটা ছিল আমার বর্তমান আইডি।ওখানে ফেইক আইডির পোস্টে এত পরিমাণ কমেন্ট হচ্ছিল যা আমি লাইক দিয়েও কুলাতে পারছিলাম না।বেশ কয়েকজন আমাকে মেসেঞ্জারে নক করে আমার সাথে খাতির জমাতেও চেষ্টা করে।কিন্তু আমার আসল আইডিতে গোটা দশেক কমেন্ট পড়েছিল।ঐ ছেলেমেয়ে গুলোর বয়স বেশিরভাগই ১৩ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে এবং বেশিরভাগই নবম দশম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রী তারা।এই যদি হয় আমাদের দেশের অবস্হা তাহলে জাতির ভবিষ্যত অন্ধকার।যাহোক এবার মূল প্রসঙ্গে আসি।

আমাদের " অবলা " বা নারী জাতির এই করুণ পরিস্হিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাদের নিজেদেরই সক্রিয় হতে।এজন্য কোনভাবেই স্বকিয়তা হারানো যাবেনা।নারীদের একটা কথা মনে রাখতে হবে নারীর সৌন্দর্য তার নারীত্বে।নারীদের স্বাভাবিক পোশাকের বাইরে যা প্রকাশ পায় তা কোন সৌন্দর্য নয়,তা হলো কাম।তাই আমাদের আধুনিক যুগের মেয়েদের উচিত আধুনিক চিন্তা ভাবনা করা,নিজ নিজ ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা এবং নিজেদের কল্যাণের জন্য নিজেদেরই পরীশ্রমী হওয়া এবং বিদ্যা বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে পূর্ণাঙ্গ রুচিশীল মানুষে পরিণত হওয়া।সর্বোপরি নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা।তাহলে নারীজাতি শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তি লাভ করবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাভিয়ানগর, অষ্টগ্রামের কৃতি ছাত্র।

Post Your Comment

সম্পাদক: গোলাম রসূল, উপদেষ্টা সম্পাদক: কুদ্দুস আফ্রাদ ও ইব্রাহিম খলিল খোকন, নির্বাহী সম্পাদক: এস. এম. ফরহাদ
বার্তাকক্ষ: 01911214995, E-mail: info@vatirrani.com
Developed by CHAHIDA.COM