সোমবার, ২০ মে ২০২৪
 
vatirrani News

শোভা

খাইরুল ইসলাম | ৯:৪২ অপরাহ্ন, ৩ জানুয়ারী, ২০১৮

1514994150.jpg
খাইরুল ইসলাম

আমি একটা দোকানে সুসজ্জিত বাক্সে ছিলাম।তখনও দুনিয়ার আলো সেভাবে আমার দেখা হয়নি।অনেকেই তখন আমাকে বাক্স থেকে বের করে দেখে গেল,কিন্তু কেউই পছন্দ করলনা।কিংবা কেউ করলেও দামে না হওয়ায় খরিদদার আমাকে নিতে পারেনি।

যাহোক পনের দিনের মাথায় আমার জায়গা হলো একটা আলো সজ্জিত শো রুমে।ঐদিনই একজন যুবক আমাকে পছন্দ করেছিল। আমাকে বাক্স থেকে খুলে তখন শো রুমে রাখা হয়েছিল।শো রুমের নানা বর্ণের উজ্জল আলোয় আমার গা চকচক করছিল। আমার সৌন্দর্য যে প্রলুব্ধকর ছিল এটা তারই প্রমাণ। যাহোক যুবকটি তার বাবাকে খুব জোড় করে বলল এ ফোনটাই আমাকে কিনে দিতে হবে।তখন যে আমার কি খুশি লেগেছিল!অবশেষে আমাকে দোকান থেকে কিনে নিয়ে আসা হলো।শো রুমের সুন্দর কক্ষ ত্যাগ করে আসতে আমার ইচ্ছে করছিল না।তবু মনে খুব আনন্দ লেগেছিল।আবার ভয়ও কাজ করছিল কিনা কি করে বসে আমাকে।

আমরা একটা লোকাল বাসে করে বাসায় ফিরেছিলাম।বাসায় পৌছার পর ছেলেটা আমাকে ইউজ না করে ওপেন করেই চার্জে দিল।কিন্তু তখন আমার খিদা পাইনি।আমি ভাবলাম ছেলেটা আমাকে ভালবাসে না।তাই খুব অভিমান হলো।

৪ ঘণ্টা পর ছেলেটা আমাকে চার্জ থেকে খুলে তার ইস্ত্রি করা নতুন শার্ট দিয়ে মুছল।তখন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।আমার অভিমানও শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমাকে হাতে নিয়ে সে খুব খুশি হয়েছিল।আমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সে আমার নাম দেয় শোভা। আমিও ভালভাবে কাজ করতে লাগলাম।আমার কাজের গতিতে সে মুগ্ধ ছিল।তাই কিছুক্ষণ পরেই সে আমাকে নিয়ে গেল বন্ধুদের দেখাতে।তার বন্ধুরাও আমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিল। তাদের তাকানো দেখে বুঝতে পেরেছিলাম সবাই আমাকে খুব পছন্দ করেছে।তার বন্ধুরা আমাকে হাতে নিতে ব্যাকুল ছিল।সবাই আমাকে দিয়ে পিক তুলল এবং তা দেখ মুগ্ধ হলো।আমাকে নিয়ে এক পর্যায়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেলে আমি মাটিতে পড়ে যায়। আমি যদিও খুব ব্যাথা পাইনি কিন্তু আমার সমগ্র শরীর ধুলায় ভরে গিয়েছিল। সাথে সাথে আমার মনিব আমাকে তুলে তার নতুন শার্ট দিয়ে আমার গায়ে লেগে থাকা ধুলা পরিষ্কার করছিল।তার চোখ দুটি বড়বড় করে তাকিয়ে পরীক্ষা করছিল আমি খুব ব্যথা পেয়েছি কিনা।সে তখন আমার জন্য তার বন্ধুদের গালিও দিলো।কিন্তু বন্ধুরা কেউ কিছুই বলল না।বরং মাথা নিচু করে অপরাধীর মত শুনল।তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার মনিব আমাকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আমাকে খুব নরম হাতে বুকের উপর রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলে সে আমাকে চুরে নিয়ে যেতে পারে এই ভয়ে ড্রয়ারে তালবদ্ধ করে রাখল।পরদিনই আমার জন্য একটা সুদর্শন কভার নিয়ে আসল এবং স্টিকারও লাগিয়েছিল।এতে আমার সৌন্দর্য ও বহুগুণে বৃ্দ্ধি পেয়েছিল। এভাবে অসম্ভব যত্নে আমার দিনগুলো কাটতে লাগল।

একদিন আমার মনিবের ছোট বোনের কাছে আমাকে দিয়েছিল গান শুনতে,আমিও সুন্দর ভাবে একটা DJ গান শুনাচ্ছিলাম। কিন্ত হঠাৎ কি মনে করে আমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার ডিসপ্লে ফাটিয়ে দিয়েছিল।সাথে সাথে আমার মনিব তার ছোট বোনকে আমার জন্য একটা চড় মেরে শাস্তি দেয়।তখন খুব ব্যথা পেয়েছিলাম কিন্তু আমার মনিবের আদর পেয়ে মন খারাপ হলোনা।

এভাবে আমার এক বছর কেটে গেল অসীম যত্ন আর সীমাহীন ভালবাসায়। আমার বয়স হওয়ায় আমার কাজের গতি কমতে থাকলো।আমার মনিব আমাকে দিয়ে বেশির ভাগ সময় নেট ইউজ করতেন আর গেম খেলতেন।আমার কাজের গতি কমে যাওয়ার কারণে আমার মনিব মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সাথে হেরে যেত।তখন তার মন খারাপ করত কিন্তু ভুলেও কোনদিন আঘাত করত না।এতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম সে আমাকে খুব ভালবাসে।

একদিন সে আমাকে দিয়ে কথা বলছিল একজনের সাথে।আমি তখন শব্দের মান সর্বোচ্চ রেখেছিলাম।কিন্তু কথা বলার ফাকে হঠাৎ কি মনে করে সে আমাকে জোড়ে মাটিতে ছুড়ে মারে।এতে করে আমার দেহ অচল হয়ে পড়ে।কিছুক্ষণ পর সে আমাকে তুলে নেয়।তারপর ওপেন করার চেষ্টা করে।কিন্তু দু তিন সেকেন্ড ওপেন হবার চেষ্টা করেই আবার আমার চূর্ণবিচূর্ণ ডিসপ্লের লাইট নিভে যায়।আমি বুঝতে পারলাম না আমাকে বিনা দোষে আমার মনিব কেন এই শাস্তি দিল।আমি ভাবতাম সে আমাকে পৃথিবীর সবকিছুর চেয়েও বেশি ভালবাসে।তাই তার তার কাছ থেকে এই প্রলয়ংকারী শাস্তি মেনে নিতে পারছিলাম না।তাই আমি মনের দুঃখে কাদতে লাগলাম।

দুদিন পরে আমাকে আমার মনিব এক মেকারের কাছে নিয়ে যায়।কিন্তু অনেকক্ষণ পরীক্ষা করে মেকার ঘোষণা দেয় আমাকে নাকি আর সুস্থ্য করা সম্ভব না।এ কথা শুনে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম।কারণ তখন আমার খুব বাঁচতে ইচ্চা করছিল। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হয়নি।পরে আমার মনিব আমাকে পাষণ্ডের মত মাত্র ৭০০টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়।আমার মনিব যখন অচেনা মেকারের কাছে রেখে আসছিল তখন আমি চেচিয়ে চেচিয়ে চিৎকার শুরু করি আমার মনিবের সাথে ফিরে যেতে। কিন্তু কেউ আমার কান্না শুনতে পায়নি।দুদিন পরেই মেকার আমার দেহের সচল অঙ্গ গুলোকে জল্লাদের মত খুলে খুলে একটা বাক্সে রেখেছিল।আর এভাবেই আমার মৃত্যু হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাভিয়ানগর, অষ্টগ্রামের কৃতি ছাত্র।

Post Your Comment

সম্পাদক: গোলাম রসূল, উপদেষ্টা সম্পাদক: কুদ্দুস আফ্রাদ ও ইব্রাহিম খলিল খোকন, নির্বাহী সম্পাদক: এস. এম. ফরহাদ
বার্তাকক্ষ: 01911214995, E-mail: info@vatirrani.com
Developed by CHAHIDA.COM