জেনে নিন গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনো কেন করবেন...
ছেলে না মেয়ে দেখতে-অবশ্যই না
ডা.ঝুটন চন্দ্র বণিক | ৮:০৭ অপরাহ্ন, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮
ডা.ঝুটন চন্দ্র বণিক, এক্টপিক প্রেগন্যান্সি, আল্টাসনোগ্রাফি, মোলার প্রেগন্যান্সি
মাসিক বন্ধ মানেই যে পেটে সন্তান তা কিন্তু সঠিক নয়। অনেক কারণ রয়েছে পেটে সন্তান আসা ছাড়াও মেয়েদের মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। তাই মাসিক বন্ধ হলেও এমনকি প্রসাব টেস্ট পজিটিভ আসলেও গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে আলট্রাসনো করা উচিত, না হলে নিচের ছবির মত ( মোলার প্রেগন্যান্সি) সহ এমন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ লুকায়িত থাকতে পারে,যা সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করলে বর্তমানে তথা পরে সন্তান ধারণক্ষমতার সমস্যাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও আরো অনেক অবস্থা রয়েছে যেখানে মাসিক বন্ধ, প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজেটিভ কিন্তু আল্টাসনোগ্রাফি করে দেখা যায় গর্ভে (জরায়ুতে) বাচ্চা নেই যেমন এক্টপিক প্রেগন্যান্সি মানে জরায়ু ছাড়া অন্য কোথাও বাচ্চা হয়েছে এবং সেটা সাধারণত জরায়ুর নালিতে (ফেলুপিয়ান টিউব), ডিম্বানুতে (ওভারি) বা পেটের মধ্যে হয়। তাই আল্টাসনোগ্রাম করার প্রয়োজন আছে।
আবার অনেক ডিম্বানুজনিত (ওভারির টিউমার বা ক্যান্সর) রোগ আছে যেখানে মাসিক বন্ধ থাকতে পারে কিন্তু প্রেগন্যান্সি টেস্ট সাধারণত পজিটিভ হয় না , সেক্ষেত্রেও কিন্তু আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রোগ নির্ণয় করতে হয়। তাই বলার প্রয়াস এমন অনেক কন্ডিশন আছে যেখানে মাসিক বন্ধ হলেই আমরা গর্ভাবস্থা মনে করি ঠিকই কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক সমস্যা তাই সেসব অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা সমাধানে আমাদের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে, পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে এবং যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না হয় সেইদিকে খেয়াল রেখে পরামর্শ মত চলতে হবে। মনে রাখতে আমাদের সচেতনতাই কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছে। তাই আমার এই ক্ষুদ্র চেষ্টা সচেতনতার মাত্রা একটু বাড়ানো।
নিচের কিছু পরামর্শ যেগুলো আপনার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে, গর্ভাবস্থায় যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা এড়িয়ে চলতে কি কি করণীয় :
১) অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভাবস্থা এড়িয়ে চলুন।
২) মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে বাচ্চা নিতে হবে।
৩) এম আর, ডিএনসি এসব পরিহার করতে হবে তাই প্রয়োজন সঠিক ডিসিশন বাচ্চা নেওয়ার আগে, কারণ মনে রাখবেন এসব পদ্ধতি করিয়ে অনেকেই বাচ্চা নষ্ট করছে ঠিকই কিন্তু ভবিষ্যতে দেখা দিচ্ছে বাচ্চা না হওয়া সহ নানান সমস্যা যা সারাজীবন মানসিক অশান্তি র কারণ হচ্ছে।
৪) বাচ্চা নেওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ প্রয়োজন।
৫) বেশি বয়সে বাচ্চা নেওয়া যাবে না তাতে করে জন্মগত ত্রুটিজনিত রোগ দেখা দেয় ( যেমন-তালু কাটা, ঠোট কাটা, ডাউন সিন্ড্রোম -মানসিক বিকাশগত ত্রুটি ইত্যাদি)।
৬) ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।
গর্ভাবস্থায় কখন আল্টাসনোগ্রাফি করাবেন :
১) গর্ভাবস্থার প্রথমদিককার সময়ে একটি করে রাখা ভালো দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে কারণ এক্টপিক প্রেগন্যান্সি , মোলার প্রেগন্যান্সি আছে কিনা তা বুঝার জন্য।
২) ৫ মাসে একটি, কারণ সেই সময় ভালো বুঝা যায় বাচ্চার কোনো জন্মগত ত্রুটি আছে কিনা ( তালু কাটা, ঠোট কাটা, মাথা নাই এসব রোগ নির্ণয় করা যায়)।
৩) ৮ মাসের সময়, এই সময়ের পরে বাচ্চার পজিশন সাধারণত আর ঘোরে না, আর গর্ভের ফুল কোথায় কিভাবে আছে সেটাও দেখা হয়।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় আরোও কিছু পরীক্ষা করতে হয় যা অতীব জরুরী যা নিয়ে অন্য কোনো দিন বিশদ আলোচনার চেষ্টা করবো। সুস্থ্য থাকুন, আমাদের সাথে থাকুন, সচেতন হউন আর অন্যকেও সচেতন করে তুলুন। আর ভাটির রানির সাথেই থাকুন।
লেখক: ডা.ঝুটন চন্দ্র বণিক
মেডিকেল অফিসার
গণভবন, ঢাকা।