বৃহঃস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
 
vatirrani News

প্রচ্ছদ প্রবাস জীবন কুলিয়ারচরে টার্কির খামার করে প্রবাসীর সফলতা

কুলিয়ারচরে টার্কির খামার করে প্রবাসীর সফলতা

১১:০৩ অপরাহ্ন, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

1517850205.jpg

টার্কির খামার ও হ্যাচারি করে পেয়েছেন সফলতা কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে কাতার প্রবাসী তুহিনুল হক। এই শিল্পে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফার হাতছানি রয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

তুহিনুল হকের গড়ে তোলা ‘তুহিন টার্কির খামার ও হ্যাচারি’ পাঁচশত টার্কি নিয়ে গড়ে উঠেছে। খামারটি এক বছরের ব্যবধানে ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করায় খামারটিকে তিনি শীগগিরই তিন হাজার টার্কিতে উন্নীত করবেন বলে প্রত্যাশা করছেন। তার অভিমত, প্রবাসী বাংলাদেশীরা যদি তার মতো দেশে এই রকম টার্কির খামার গড়ে তোলেন তবে তারাও লাভবান হবেন।

ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রামের বাসিন্দা তুহিনুল হক। ২০০০ সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর পাড়ি জমান কাতারে। সেখানে গিয়ে বড়ভাই এমদাদুল হকের ঠিকাদারি ব্যবসায় যোগ দেন। পরে তিনি নিজেই ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন এবং ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন।

ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টার্কির চাষ করে লাভবান হবার খবর জানতে পেরে ২০১৭ সালের শুরুতে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার একরামপুর এলাকায় পাঁচ বিঘা জমি কিনে সেখানে গড়ে তুলেন তুহিন টার্কি খামার ও হ্যাচারি। দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এবং বেকারত্ব দূরীকরণ করার পাশাপাশি নিজে লাভবান হতে তিনি এই খামার গড়ে তুলেন বলে জানান।

পাঁচবিঘা আয়তনের খামার বাড়িটিতে তিনি তিনটি শেড নির্মাণ করেছেন। সেখানকার একটি শেডে বর্তমানে পাঁচশত টার্কি পালন করা হলেও, অচিরেই তিনি সেটা তিন হাজারে উন্নীত করবেন এবং তার খামারে উৎপাদিত ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সেগুলির মাধ্যমে বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ করে শত শত খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

টার্কির জন্য খামার এলাকায় ঠান্ডা পরিবেশ তৈরির জন্য তিনি সেখানে দুইশত আম, দুইশত লিচু এবং দেড়শত কাঁঠালের গাছ রোপন করেছেন। এই ফলের গাছগুলো যখন ফলবান হবে, তখন সেইখাত থেকেও তার বড় একটা মুনাফা আশা করছেন তিনি। এতে এলাকাবাসীসহ দেশের মানুষও লাভবান হবেন বলেও জানান তিনি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান, তার মতো তারাও যেনো দেশে নিজ নিজ এলাকায় পোল্ট্রিশিল্পে বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।

তুহিনুল হকের খামারে কর্মী সাদেক মিয়া ও ইউনুস শেখ জানান, এখানে কাজ করে তারাও বেশ ভালো আছেন। টার্কির খামারের কাজে খুব একটা ঝামেলা নেই উল্লেখ করে তারা আরও জানান, টার্কির প্রধান খাবার হলো ঘাস। খাদ্যের শতকরা ৭০ ভাগই মাঠ-ঘাটের ঘাস থেকে আসে। কচুরিপানাও টার্কির প্রিয় খাবার। খাদ্যের ৩০ ভাগ গম ও ভুট্টার ভূষি থেকে পূরণ করা হয়। ডিম দেওয়ার সময় হলে খামারেই ডিম দেয় টার্কি মুরগিগুলো। সেই ডিম সংগ্রহ, খাবার দেওয়া, ময়লা পরিষ্কার করাসহ দেখ-ভাল তাদের প্রধান কাজ বলে জানান।

তার খামার থেকে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে দুইশত করে ডিম উৎপাদন হচ্ছে। এর পরিমাণ দ্রুতই আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। উৎপাদিত ডিম থেকে খামারের হ্যাচারিতে বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। উৎপাদিত বাচ্চাগুলি খামারের কর্মীরা কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাসহ নরসিংদী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন। একদিন থেকে সাতদিন বয়সী প্রতিটি বাচ্চা বিক্রি করা হয় তিনশ থেকে ছয়শত টাকায়।

তুহিনুল হকের এই খামার থেকে মুরগি, ডিম এবং হ্যাচারিতে উৎপাদিত বাচ্চা-তিন পর্যায়েই বাজারজাত করা হয়। আর খামারের এই কাজে নিয়োজিত কর্মী কাইয়ুম মিয়া জানান, দেশের বিভিন্ন বাজারে মাংস, ডিম ও বাচ্চা সব কিছুরই ব্যাপক চাহিদা আছে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় তাদের উৎপাদন সীমিত উল্লেখ করে কাইয়ুম জানান, খামারটি তিন থেকে চার হাজারে উন্নীত করা হলে তিনি তার গ্রাহকদের চাহিদা মতো সরবরাহ করতে পারবেন।

তার খামার দেখ-ভালের জন্য একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দিয়েছেন তুহিনুল। তার অনুপস্থিতিতে মূলত তিনিই খামার দেখ-ভাল করেন। তার নিকটাত্মীয় প্রফেসর মাসুদুল আমিন শেখ জানান, তুহিনুল হক প্রবাসী হিসেবে যেমন সফল, তেমনি খামারী হিসেবেও। এই টার্কির খামারটি ছাড়াও তিনি কুলিয়ারচর উপজেলায় তিনটি পুকুর নিয়ে একটি মৎস্য খামার এবং দুইটি লেয়ার মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। তার ওইসব খামারেও কর্মসংস্থানে তৈরির পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি হচ্ছে সমৃদ্ধ।

টার্কির খামারকে প্রাণিসম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আইটেম উল্লেখ করে কুলিয়ারচর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নিখিল চন্দ্র দেবনাথ জানান, বর্তমানে কুলিয়ারচরে বেশ কয়েকটি টার্কির খামার গড়ে উঠেছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি। এক্ষেত্রে বেকার শিক্ষিত যুবকরাই এগিয়ে আসছে। ওইসব খামারিদের উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ টেকনিক্যাল সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তুহিনুল হকের মতো এলাকার অন্যান্য প্রবাসীরাও দেশের পোল্ট্রিখাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।

সূত্র: অর্থসূচক 

Post Your Comment

সম্পাদক: গোলাম রসূল, উপদেষ্টা সম্পাদক: কুদ্দুস আফ্রাদ ও ইব্রাহিম খলিল খোকন, নির্বাহী সম্পাদক: এস. এম. ফরহাদ
বার্তাকক্ষ: 01911214995, E-mail: info@vatirrani.com
Developed by CHAHIDA.COM