ভৈরবের আরও ৩ মানবপাচারকারী গ্রেফতার
নিউজ ডেস্ক | ৩:২১ অপরাহ্ন, ৩ জুন, ২০২০
লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় আরও তিন মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। মঙ্গলবার (২ জুন) রাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে র্যাব-১৪ এর ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের গ্রেফতার করেন। এ নিয়ে ভৈরবে দায়ের করা মামলায় আটজনকে গ্রেফতার করা হলো।
গ্রেফতাররা হলেন- ভৈরবের শম্ভুপুর গ্রামের মৃত আহাদ মিয়ার ছেলে মো. হেলাল মিয়া ওরফে হেলু (৪৫), তাতারকান্দি গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে মো. খবির উদ্দিন (৪২) ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়া সরকারের ছেলে শহীদ মিয়া (৬১)। সন্দেহভাজন হিসেবে শম্ভুপুর গ্রামের জাফরের স্ত্রী মুন্নি আক্তার রুপসীকে (২৫) আটক করা হয়েছে।
বুধবার (৩ জুন) দুপুরে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ ক্যাম্পের সিও লে. কর্নেল এফতেখার উদ্দিন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, নিহত মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব এবং আহত জানু মিয়া মানবপাচারকারী মো. হেলাল মিয়া ওরফে হেলু ও মো. খবির উদ্দিনের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রতিজন তিন লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া যান।
নিহত সাকিব, আকাশ, শাকিল এবং আহত সোহাগ দালাল তানজিল (বর্তমানে লিবিয়ায়), নাজমুল (তানজিলের ভাতিজা), জুবুর আলী এবং মিন্টু মিয়ার মাধ্যমে প্রতি জন চার লাখ টাকার চুক্তিতে অবৈধভাবে লিবিয়া যান। নিহত রাজন চন্দ্র দাস কুখ্যাত দালাল জাফর ও তার স্ত্রী মুন্নি আক্তার রুপসী, মানিক, হিরা এবং শহিদ মিয়ার মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা দিয়ে অবৈধভাবে লিবিয়া যান।
মানিক ও জাফর লিবিয়ায় থেকে মানবপাচারে নেতৃত্ব দেন এবং বাংলাদেশে তাদের হয়ে লোক সংগ্রহ করা, আর্থিক লেনদেনসহ যাবতীয় কাজ পরিচালনা করতেন শহিদ মিয়া, হিরা, মুন্নি আক্তার রুপসী এবং হযরত আলী। বাংলাদেশে তানজিলের মানবপাচার কারবার পরিচালনা করতেন তার ভাতিজা নাজমুল, জুবুর আলী এবং মিন্টু মিয়া।
লে. কর্নেল এফতেখার উদ্দিন আরও জানান, তারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশি চক্রের সঙ্গে যোগসাজসে অবৈধভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে আসছে। গ্রেফতার মানবপাচারকারীরা লিবিয়াতে অবৈধভাবে পাঠানোর ক্ষেত্রে মূল হোতা হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তারা বাংলাদেশি গরিব শ্রমিকদের বেশি টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে লিবিয়াতে পাঠানোর স্বপ্ন দেখাতো। শ্রমিকরা এ সকল প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে জমিজমা বিক্রি করে দালালদেরকে ৩-৪ লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।
লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাচারকারী দলের সদস্যরা লিবিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে ভিকটিমদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা দাবি এমনকি শারীরিক নির্যাতন করে নির্যাতনের ভিডিও ভিকটিমদের পরিবারের নিকট পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। ভিকটিমের পরিবার স্বজনদের জীবন বাঁচাতে টাকা পাঠাতে বাধ্য হয়।
এর আগে লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে গ্রেফতার ভৈরবের শ্রীনগর গ্রামের মো. বাহারুল আলম ওরফে বাচ্চু মিলিটারিকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তার দেয়া তথ্য মতে র্যাব অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
লিবিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সাদ্দাম হোসেন আকাশের বড় ভাই মোবারক হোসেন বাদী হয়ে গত রোববার (৩১ মে) দুপুরে সাতজনকে আসামি করে ভৈরব থানায় মামলা করেন। এতে ভৈরবের মানবপাচারকারী তানজিরুলকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়াও আজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর ভৈরব থেকে সিআইডি বাচ্চু মিলিটারিকে গ্রেফতার করে। তিনি ওই মামলার দ্বিতীয় আসামি।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে তানজিরুল ওরফে তানজিদ (৩৫), একই গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে মো. বাচ্চু মিলিটারি, তানজিদের ভাতিজা নাজমুল (২৪), মৌটুপি গ্রামের ঈদু মিয়ার ছেলে জবুর আলী (৫৫), লক্ষীপুর গ্রামের জাফর (৩৫), শম্ভুপুর গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে স্বপন ও গোছামারা গ্রামের মিন্টু মিয়া (৩৫)।
গত ২৮ মে লিবিয়ায় অপহরণকারীদের গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। এদের মধ্যে ভৈরবের সাতজন নিহত ও তিনজন আহত হন।
নিহতরা হলেন- মোহাম্মদ আলী (২৫), মাহবুবুর রহমান (২১), রাজন চন্দ্র দাস (২৭), সাকিব মিয়া (১৮), সাদ্দাম হোসেন আকাশ (২৫) ও শাকিল (২০)। আহত অবস্থায় লিবিয়ায় চিকিৎধীন আছেন সোহাগ আহমেদ, মো. সুজন মিয়া ও মো. জানু মিয়া।
সূত্র: জাগোনিউজ