প্রচ্ছদ সাহিত্য ও সংস্কৃতি "আমার মুক্তিসংগ্রাম": পাঠকের প্রতিক্রিয়া
"আমার মুক্তিসংগ্রাম": পাঠকের প্রতিক্রিয়া
তুষার সরকার | ৪:১০ অপরাহ্ন, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০
তুষার সরকার: মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীতেও গ্রন্থিত অষ্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ৷ তবে সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুল হক রচিত দেশ পাবলিকেশন্স প্রকাশিত " আমার মুক্তিসংগ্রাম" গ্রন্থখানা সে বন্ধ্যাত্ব কিছুটা হলেও ঘুচিয়েছে ! যদিও উহা একজন কিশোর যোদ্ধার ব্যক্তিগত অনুভূতি ও বার্ধক্যে এসে প্রত্যাশার বচন ৷ তবে তা নির্মোহ হয়েই প্রক্ষেপিত হয়েছে ৷ মুক্তিযোদ্ধাগনের যুদ্ধে অংশগ্রহণের পেছনে অনেক কারণের কথা শুনে থাকলেও "একটি চড়ের প্রতিশোধ নিতে " মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া নতুন প্রজন্মকে চিন্তার নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে ৷ ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ অনেকটা পিকনিক পিকনিক মনে হলেও এর পেছনে কি আর্থ-সামাজিক সংকট ও কষ্টসাধ্য তা লেখকের সুনিপুণ তুলিতে উঠে এসেছে ৷ সামরিক বিজ্ঞানের সাথে পাঠককে সংক্ষিপ্ত হলেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ৷ কিংবদন্তী বশ্যা মিয়া সম্পর্কে জানাতে ভুল করেননি লেখক৷ শিশুকালে অপঘাতে পিতৃহারা কিশোরের বিধবা মা, শিশু ভাই কে ফেলে যুদ্ধ যাত্রা, পাথেয়'র জন্য প্রিয় ঘড়ি স্বল্পমূল্যে বিক্রি বা গ্রামের পাশ দিয়ে নৌকা চালিয়ে যাওয়ার সময় রাজাকারদের কারণে মার সাথে দেখা না করতে পেরে চোখের পানি হাওরের পানি একাকারে বা গাইড বখিল মিয়ার জন্য পাঠকের চোখে পানি চলে আসতে পারে ৷ বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ পাঠে গ্রন্থখানা হয়ে উঠবে একটি ফলিত ইতিহাস ৷ অষ্টগ্রামের তিনটি যুদ্ধের বিশদ বর্ণনা, রাজাকারদের অবস্হান, সর্বোপরি বধ্যভূমি সুনির্দিষ্টকরণ - গ্রন্থখানাকে Referal book হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে ৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে অশংঙ্কোচ বিষয় তিনি প্রকাশ করেছেন নিঃশঙ্কোচে ৷ তবে পাঠকের প্রশ্ন জাগতে পারে অষ্টগ্রামের কাজী বারী, ফিরোজ মিয়া, মজির উদ্দিন বুলবুল, ফজলুল হক হায়দারী বাচ্চু, মফিজ উদ্দিনসহ আরো অনেকের ভূমিকা কি ছিল ? ওঁনাদের ভূমিকার কিছু বর্ণনা থাকলে গ্রন্হখানা আরো সমৃদ্ধ হতো৷ শাপলা মিয়া না হাপলা মিয়া, ১৯৭১ সালে কিশোরগন্জ ছিল মহকুমা জেলা নয় -এমন কিছু অসঙ্গতি যা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন হবে আশাকরি৷ দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ-বাধাই, অফসেট কাগজের "আমার মুক্তিসংগ্রাম" আমাদের অমূল্য দলিল হয়ে থাকবে৷ আর সমৃদ্ধ হবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস৷