শিক্ষা খাতে সরকারের ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া (কাঞ্চন) | ১০:১১ পূর্বাহ্ন, ৪ জুলাই, ২০২০
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া (কাঞ্চন)
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া (কাঞ্চন): মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরেই আজ নতুন-স্বাভাবিক সময়েও বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুতের বাতি ও শিক্ষার আলো পৌছেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ঘরে তুলছে বাংলাদেশ। ঘরে বসেই সব কাজ করা যাচ্ছে অথচ আজ থেকে মাত্র ১০-১২ বছর আগেও অনেকে ডিজিটাল বাংলাদেশকে অলীক স্বপ্নই ভাবতেন। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাংলাদেশকে নিয়ে সুদূরপ্রসারী স্বপ্নগুলোই আজ বাস্তব।
দেশব্যাপী ফোর-জি ইন্টারনেট সুবিধার বিস্তৃতির কারণে করোনার এই দুঃসময়েও ঘরে বসেই অফিস এবং এমনকি আদালতের যাবতীয় কাজও চলছে। আগামী ৭ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও শুরু হতে যাচ্ছে অনলাইন ক্লাস। এই সবই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল।
গত ১০ বছরে শিক্ষা খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন হলো শিক্ষায় কিছু দৃশ্যমান সাফল্য। এই অর্জন এখন সারা বিশ্বে স্বীকৃত। আফ্রিকা বা অনগ্রসর দেশগুলো যখন শিক্ষায় ছেলেমেয়ের সমতা অর্জনে হিমশিম খাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্তরেই ছেলেমেয়ের সেই সমতা অর্জন করে ফেলেছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, এখন প্রাথমিকে ছাত্রীদের হার প্রায় ৫১ শতাংশ, যা মাধ্যমিকে প্রায় ৫৪ শতাংশ। ১০ বছর আগেও প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা মূলধারায় ছিল না। সেটি মূলত উচ্চমধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের সন্তানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ইংরেজি মাধ্যম বা কিন্ডারগার্টেনেই কেবল প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হতো। এখন প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে।
স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পর ২০১০ সালে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি পেয়েছি। প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ, ঝরে পড়া কমেছে অনেকাংশেই। প্রাথমিকের এক কোটি ৩০ লাখ শিশু উপবৃত্তি পাচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও অর্জিত হয়েছে জেন্ডার সমতা। কারিগরি শিক্ষায় বর্তমানে শিক্ষার্থীর হার ১৪ শতাংশ। প্রাক্-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় চার কোটি শিশু বছরের প্রথম দিনে বিনা মূল্যে বই পাচ্ছে। স্বাক্ষরতার হার ১০ বছরে বেড়ে হয়েছে ৭৩ শতাংশ। শিক্ষা অবকাঠামোতেও বিপ্লব সাধিত হয়েছে। বিনা মূল্যের বই, উপবৃত্তি, স্কুল ফিডিংসহ সরকারের নানা পদক্ষেপের সুফল মিলছে এখন। বিশেষ করে বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাওয়ায় শিক্ষার প্রতি সবার আগ্রহ বেড়েছে। এই শিক্ষার সুফল পাওয়া যাচ্ছে অন্যান্য ক্ষেত্রেও। কমেছে বাল্যবিয়ে, কমছে ঝরে পড়াও। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ৪৮ শতাংশ থেকে কমে ২০ দশমিক ৯ শতাংশে এসেছে।
শিক্ষা খাতে এত উন্নতির কারণেই সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তবে সামনের চ্যালেঞ্জ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন। এখন প্রয়োজন শিক্ষার গুণগত মানের উন্নয়ন। এ ছাড়া ২০১৩ সালে একযোগে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে, যা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম অর্জন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ সফলভাবে গড়ে তোলার পেছনে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার যে অবদান, তিনি যে আত্মত্যাগ করে চলেছেন সেটা জাতি কোনদিনই ভুলবে না।
লেখক : চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।