মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
 
vatirrani News

প্রচ্ছদ মুক্তমঞ্চ বর্জ্য থেকে জৈবসার উৎপাদনে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভূমিকা

বর্জ্য থেকে জৈবসার উৎপাদনে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভূমিকা

তন্ময় বনিক | ৮:৫৭ অপরাহ্ন, ৭ নভেম্বর, ২০২২

1667833047.jpeg
তন্ময় বনিক

তন্ময় বনিক: সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের জীবন যাত্রার মান, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজতর করছে। এর সাথে সমহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের ব্যবহার্য্য দ্রব্যাদির পরিমাণ। দিন শেষে দেখা যায়, ব্যবহার্য অনেক জিনিস আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে অপ্রয়োজনীয় বা অব্যবহৃত জিনিসগুলো বর্জন করি বা ফেলে দেই তাদেরকে বর্জ্য বা বর্জ্য পদার্থ বলে। যেমন: বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট, দূষিত জিনিস, কাপড়দ্রব্য, চুল, মল-মূত্র, মরা জীবজন্তুর হাড় ইত্যাদি। প্রতিদিনই পৃথিবীতে প্রচুর পরিমান বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়, এবং এদের প্রকৃতি ও রাসায়নিক গঠন সবই ভিন্ন হয়ে থাকে। বর্জ্য পদার্থ উৎপাদন উৎস ও গঠন অনুসারে বিভিন্ন প্রকারের হয়। যেমন: পৌর বর্জ্য, গৃহস্থালীয় বর্জ্য, শিল্প বর্জ্য, কৃষিজ বর্জ্য, চিকিৎসা ক্ষেত্রের কঠিন বর্জ্য, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ইত্যাদি। এসব বর্জ্য পদার্থ থেকে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

চিকিৎসা সম্পর্কিত বর্জ্য থেকে সমস্যা: হাসপাতাল, নার্সিংহোম, প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি প্রভৃতি স্থান থেকে নির্গত বর্জ্য থেকে নানা ধরণের সংক্রমণ হতে পারে। যেমন: টিটেনাস, কৃমি, আমাশয়, হেপাটাইটিস, এইডস, চামড়ার রোগ, ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য থেকে সমস্যা: কৃষিক্ষেত্রের আবর্জনা পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে দিতে পারে। জমিতে প্লাস্টিক বা অনন্যা কঠিন বজ্য পড়ে থাকলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য থেকে কৃমি, আমাশয়, ফুসফুসের রোগ, পেটের রোগ ও নানা ধরণের রোগব্যাধি হতে পারে।

কলকারখানার বর্জ্য থেকে সমস্যা: কলকারখানার তরল বর্জ্য নিকটবর্তী নদী-নালা বা খালে পড়লে তা সম্পূর্ণরূপে দূষিত হয়। এতে জলজ প্রাণীদের মৃত্যু হয় এবং জলজ উদ্ভিদের ক্ষতি হয়। কলকারখানার বর্জ্য থেকে আশেপাশের অঞ্চলের মাটিও দূষিত হয়।

নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য থেকে সমস্যা: সিমেন্ট, বালি ইত্যাদি বায়ু এবং মাটি দূষণ ঘটায়। মাটির উৎপাদন ক্ষমতা একেবারে কমিয়ে দেয়। শ্রমিকদের ফুসফুসের রোগ, পেটের রোগ ও নানা ধরণের মরণব্যাধি হয়।

তেজস্ক্রির বর্জ্যের দূষণ: তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণে মাটি সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়। এই বর্জ্য পৃথিবীর সর্বাধিক ক্ষতিকর বর্জ্য। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানি পানের অযোগ্য হয়, প্রাণী ও উদ্ভিদের জিনগত পরিবর্তন হয়। জাপান, চেরনোবিল অঞ্চলে তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের দূষণের পরিমাণ সর্বাধিক।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, পৃথিবীব্যাপী উৎপাদিত কঠিন বর্জ্যের ৪৪ শতাংশ হচ্ছে খাদ্য ও খাদ্য সম্পর্কিত কঠিন বর্জ্য, ৫ শতাংশ বর্জ্য হচ্ছে কাচ ও কাচজাতীয় পন্য, ধাতব বর্জ্যের পরিমাণ ৪ শতাংশ, কাঠ, লেদার এবং রাবার জাতীয় বর্জ্য হচ্ছে ৪ শতাংশ, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত বর্জ্য হচ্ছে ১২ শতাংশ, পেপার ও পেপার জাতীয় বর্জ্য হচ্ছে ১৭ শতাংশ এবং অন্য সকল উৎস থেকে আগত বর্জ্য হচ্ছে ১৪ শতাংশ।

বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য যেমন, গৃহস্থালীয় বর্জ্য, খাদ্য বর্জ্য, কৃষিজ বর্জ্য ইত্যাদি থেকে জৈবসার (ইরড়ভবৎঃরষরুবৎ) তৈরিতে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভূমিকা অপরিসীম। নানা প্রকার ঘৃহস্থালীয় পদ্ধতি বা পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ থেকে জৈবসার তৈরি করা হয়। যেমন:খামার বর্জ্য থেকে মিশ্রসার তৈরি

বর্জ্য থেকে প্রস্তুত পচা জৈব উপাদানকে বলা হয় কম্পোস্ট সার বা মিশ্র জৈব সার। পেষাই হয়ে যাওয়া আখ, ধানের খড়, আগাছা ও অন্যান্য গাছ ও বর্জ্য থেকে তৈরি সারই হল কম্পোস্ট সার। এই সারে গড়ে ০.৫ শতাংশ নাইট্রোজেন, ০.১৫ শতাংশ ফসফরাস, ০.৫ শতাংশ পটাসিয়াম থাকে। সার তৈরির প্রাথমিক স্তরে কম্পোস্ট পিটে প্রতি টন কাঁচামালে ১০/১৫ কেজি সুপার ফসফেট বা রক ফসফেট মেশালে সারের গুণমান বাড়ানো যায়। শহরের মল, ডাস্টবিন ও রাস্তার আবর্জনা থেকে তৈরি সারও হল কম্পোস্ট সার। এতে থাকে ১.৪ শতাংশ নাইট্রোজেন, ১ শতাংশ ফসফরাস ও ১.৪ শতাংশ পটাসিয়াম। কম্পোস্ট সার তৈরির জন্য খামার বর্জ্যকে সাড়ে চার থেকে ৫ মিটার লম্বা, দেড় থেকে দুই মিটার চওড়া ও ১ থেকে ২ মিটার গভীর গর্ত খুঁড়ে রেখে দেওয়া হয়। গর্তে খামার বর্জ্যকে স্তরে স্তরে রাখা হয়। প্রতিটি স্তর গরুর গোবরের কাই দিয়ে বা জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। জমি থেকে ০.৫ মিটার উপর পর্যন্ত গর্তগুলি ভরাট করে দেওয়া হয়। ৫-৬ মাসের মধ্যে সার ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে। কম্পোস্ট সার প্রস্তুতি প্রকৃতপক্ষে গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলের জৈব অবশেষকে জীবাণু দ্বারা পচানোর প্রক্রিয়া।

সার তৈরির পদ্ধতি

ইন্দোর পদ্ধতি- জৈব বর্জ্য গোয়ালে বিছানার মতো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মূত্রে ভেজা সেই বর্জ্য এবং গোবর প্রতি দিন সরিয়ে আনা হয় এবং ১৫ সেমি স্তর তৈরি করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। মূত্রে ভেজা মাটি গোয়াল থেকে সংগ্রহ করে জলে ভেজানো হয় এবং দিনে দু-তিনবার ওই বর্জ্যের স্তরের ওপর চাপানো হয়। এই প্রক্রিয়া প্রায় দিন পনেরো চলে। তার পর খুব ভাল মানের কম্পোস্ট সার বর্জ্যের স্তরের ওপর চাপানো হয় এবং গোটা উপাদানটিকে উল্টেপাল্টে দেওয়া হয়। পুরনো সার গোটা উপাদানটিকে পচাতে সাহায্য করে। গোটা উপাদানকে পরবর্তী ১ মাস একই ভাবে রেখে দেওয়া হয়। তত দিনে এই সার পুরোপুরি আর্দ্র হয়ে যায়। এই সার আরও এক বার উল্টেপাল্টে দেওয়া হয়। এক মাসের মধ্যে নতুন সার ব্যবহারের উপযুক্ত হয়ে ওঠে।

ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি

২৫ সেন্টিমিটার পুরু শুকনো বর্জ্য পদার্থ একটি গর্তে ছড়িয়ে রাখা হয়, তার ওপর জলে ভেজা থকথকে গোবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় ভেজানোর জন্য। ভিজে স্তরের উপর শুকনো বর্জ্যের আরও একটি স্তর চাপিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে শুকনো বর্জ্যের স্তর, তার উপর গরুর গোবরের দ্রবণ, এই ভাবে স্তরে স্তরে গর্তটি মাটির উপর ০.৫ মিটার পর্যস্ত ভরাট করা হয়। এই অবস্থায় কোনও ঢাকনা না দিয়ে ১৫ দিন রাখা হয়। এর পর এই উপাদান উল্টেপাল্টে তুলে কাদা মাখিয়ে ৫ মাস বা যত দিন না ব্যবহার হচ্ছে তত দিন একই ভাবে রেখে দেওয়া হয়।

কোয়েম্বাটোর পদ্ধতি

এটি মূলত কী ধরনের বর্জ্য পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে তার ভিত্তিতে নানা মাপের গর্তে সার প্রস্তুত করা হয়। প্রথমে গর্তে বর্জ্য পদার্থের একটি স্তর বানানো হয়, তার উপর আড়াই থেকে ৫ লিটার জলে ৫ থেকে ১০ কিলো গরুর গোবরের দ্রবণ ও ০.৫ থেকে ১ কিলো হাড়ের গুঁড়োর মিশ্রণ সমান ভাবে ছড়ানো হয়। এ ভাবে যতক্ষণ না উপাদানের উচ্চতা মাটির থেকে ০.৭৫ মিটার পর্যস্ত পৌঁছাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত একের পর এক স্তর তৈরি করা হয়। এর পর এটিকে কাদামাটি দিয়ে মুড়িয়ে একই ভাবে ৮-১০ সপ্তাহ রেখে দেওয়া হয়। তার পর পুরো পদার্থটি তুলে জলে ভিজিয়ে উল্টেপাল্টে আয়তাকার স্তুপ বানিয়ে যত দিন না ব্যবহার হচ্ছে ততদিন ছায়ায় রেখে দেওয়া হয়। কোয়েম্বাটোর পদ্ধতিতে প্রথমে অবাত পচন প্রক্রিয়া তারপর সবাত পচন প্রক্রিয়া চলে। এটি ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতির বিপরীত।

কচুরি পানা দিয়ে কপাস্ট সার তৈরী পদ্ধতি

কপাস্ট তৈরীর আসল কাঁচামাল কচুরিপানা ছাড়াও খড়কুটা, ঝরাপাতা, আগাছা, আবর্জনা, ফসলের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি একত্রে মিশিয়ে পচানো হয় যা থেকে উৎকৃষ্ট মানের কপাস্ট উৎপাদন সম্ভব। বর্ষায় বাংলাদেশে ডোবা-নালাসহ জলাঞ্চলগুলো কচুরিপানায় ভরে ওঠে যার ফলে পানি দূষিত হয় এবং মশার উপদ্রব বাড়ে। অথচ এই কচুরিপানাকেই আমরা কপাস্টের আসল কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারি।

আমরা সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরী করতে পারি-

স্তূপ পদ্ধতি

অতিবৃষ্টি ও বন্যাযুক্ত এলাকার জন্য স্তূপ বা গাদা পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরী করতে হবে। বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুর বা ডোবার ধারে অথবা ক্ষেতের ধারে যেখানে বন্যার কিংবা বৃষ্টির পানি জমার কোন সম্ভাবনা নেই, এমন জায়গাকে স্তূপ পদ্ধতিতে ক¤েপাস্ট সার তৈরীর স্থান হিসাবে নির্বাচন করতে হবে। স্তূপের উপরে চালা দিতে হবে অথবা গাছের নিচে স্থান নির্বাচন করতে হবে যাতে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়। এই পদ্ধতিতে গাছের ছায়ায় মাটির ওপর ৩ মিটার দৈর্ঘ্য ১.২৫ মিটার প্রস্থ ও ১.২৫ মিটার উচুঁ গাদা তৈরী করতে হবে। সুবিধা অনুযায়ী এই মাপ কম-বেশি করা যাবে প্রথমত কচুরিপানা অথবা অন্যান্য আবর্জনা ফেলে ১৫ সে. মিটার স্তূপ তৈরী করতে হবে। স্তর সাজানোর আগে কচুরিপানা টুকরা করে ২/৩ দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এবার সাজানো স্তরের ওপর ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০০ গ্রাম টিএসপি ছিটিয়ে দেয়ার পর স্তরের উপরিভাগে ২.৫/৫ সে. মি. পুরু করে কাদা ও গোবরের প্রলেপ দিয়ে দিন। এতে পচন ক্রিয়ার গতি যেমন বাড়বে অন্যদিকে সুপার কম্পোস্ট তৈরী হবে। এভাবে ১.২৫ মিটার উঁচু না হওয়া পর্যন্ত ১৫ সে. মি. স্তর সাজানোর পর পর ইউরিয়া ও টিএসপি দিয়ে তার ওপর গোবর ও কাদা মাটির প্রলেপ দিন। গাদা তৈরী শেষ হয়ে গেলে গাদার ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।

গর্ত পদ্ধতি

পানি জমে না অথবা কম বৃষ্টিপাত এলাকা কিংবা শুকনো মৌসুমে গর্ত পদ্ধতিতে ক¤েপাস্ট তৈরী করা যায়। গাছের ছায়ার নিচে বাড়ির পেছন দিকে অথবা গোশালার পাশেই কম্পোস্ট গর্ত তৈরী করা সব দিক থেকে সুবিধাজনক। এই পদ্ধতিতে ১.২৫ মিটার প্রস্থ, ১ মিটার গভীর ও ২.৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি গর্ত তৈরী করতে হবে। গর্তের তলায় বালু অথবা কাঁকর দিয়ে দরমুজ করে দিতে হবে যাতে জলীয় পদার্থ শোষণ করে নিতে পারে। প্রয়োজনে ধানের খড়ও বিছিয়ে দিতে হবে, তা সম্ভব না হলে গোবর কাদার সাথে মিশিয়ে গর্তের তলা এবং চারপাশে লেপে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে গর্তের ওপর দিকে ভুমি থেকে খানিকটা উঁচু করে আইল তৈরী করে দিতে হবে যাতে কোন রকমে পানি গড়িয়ে গর্তে পড়তে না পারে। এবার গাদা পদ্ধতির মতো করে গর্তে কচুরিপানা স্তরে স্তরে সাজিয়ে কম্পোস্ট তৈরী করতে হবে। অথবা গোয়াল ঘরে গোবর, গো-চনা, পাতা, আখের ছোবড়া, কলাপাতা যাবতীয় উচ্ছিষ্ট অংশ গর্তে ফেলতে হবে। সম্ভব হলে গো-চনার সাথে কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে দিতে পারলে ভাল হয়। এমনি এক একটি স্তরের ওপর মাটির প্রলেপ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মাটির প্রলেপ দেয়ার আগে স্তর ভালভাবে ঠেসে দিতে হবে। গর্ত ভরাট না হওয়া পর্যন্ত এমনিভাবে স্তর তৈরী করতে হবে। প্রত্যেকটি স্তর তৈরীর পর মাটির প্রলেপ দেওয়ার আগে পরিমান মতো ইউরিয়া সার ছিটাতে হবে। এরূপ একটি গর্তে তিন টন আবর্জনার জন্য ১/২ কেজি ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হবে। গর্ত ভরাট হয়ে যাওয়ার পর গোবর ও মাটি মিশিয়ে উপরিভাগে প্রলেপ দিতে হবে। এভাবে তিন মাস রাখার পর এই সার ব্যবহার উপযোগী হবে।

এভাবেই ঘৃহস্থালীয় বা পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে জৈবসার (ইরড়ভবৎঃরষরুবৎ) উৎপাদন করতে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি আমাদের দেশের সরকার বর্জ্য পদার্থ থেকে জৈবসার উৎপাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আবাসন পরিকল্পনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করে কঠিন বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন ও জৈবসার প্রস্তুত করা হচ্ছে। কক্সবাজারে বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ১০ টন জৈব সার উৎপাদন করবে সরকার। কক্সবাজারের মিঠাছড়িতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে বর্জ্য থেকে জৈবসার উৎপাদন কারখানা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্জ্য থেকে জৈবসার উৎপাদনে সিডিএম প্রকল্পের দলিল হস্তান্তর ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান স¤পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) গার্ভেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রকল্পের মাধ্যমে আবর্জনা থেকে জৈব সার উৎপাদন করছে। এর মাধ্যমে আবর্জনার সৃষ্ট দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষা, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, মাটি নরম করা এবং মাটি বেশি করে পানি শোধন করে। ফলে বৃক্ষ ও ফসল দ্রূত বৃদ্ধি পায়। বর্জ্য থেকে জৈবসার উৎপাদনে সরকারকে প্রতিটি জেলা শহর, এমনকি পর্যায়ক্রমে প্রতিটি উপজেলায় বর্জ্য দিয়ে জৈবসার উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে, দীর্ঘমেয়াদি ঋণে বেসরকারি পর্যায়ে জৈবসার উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের ব্যবস্থা নিলে একদিকে বর্জ্যের আগ্রাসন যেমন বন্ধ হবে অন্যদিকে মাটির খাদ্য জৈবসারের সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এতে করে আবাদি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে এবং ফসল উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে, যা আমাদের ঘন জনসংখ্যার দেশের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে।

উল্লেখ্য, এখনও দেশের মোট চাহিদার রাসায়নিক ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সারের সিংহভাগ আমদানি করে দেশি চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে বিশেষ করে নন-ইউরিয়া সারের আমদানি-নির্ভরতা অনেক বেশি। যদি গোটা দেশে বর্জ্য থেকে জৈবসার উৎপাদনের মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তাহলে মাটির খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Post Your Comment

সম্পাদক: গোলাম রসূল, উপদেষ্টা সম্পাদক: কুদ্দুস আফ্রাদ ও ইব্রাহিম খলিল খোকন, নির্বাহী সম্পাদক: এস. এম. ফরহাদ
বার্তাকক্ষ: 01911214995, E-mail: info@vatirrani.com
Developed by CHAHIDA.COM