কুলিয়ারচরে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করায় প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার
নিউজ ডেস্ক | ১০:১৬ অপরাহ্ন, ৩ জুলাই, ২০২০
প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম মিয়া
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে নিজ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগে দায়ের করা বহুল আলোচিত মামলার প্রধান আসামি দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম মিয়া (৪২) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কুলিয়ারচর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ ও এসআই মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস টিম শুক্রবার (৩ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে নরসিংদী জেলার আমিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে।
সেখানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত এই প্রধান শিক্ষক। গ্রেপ্তারের পর তাকে কুলিয়ারচর থানায় নিয়ে আসা হয়।
ছাত্রীর পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, গত ৯ জুন সকালে দড়িগাঁও গ্রামের দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রীটি (১২) প্রতিদিনের ন্যায় সেলিম মাস্টারের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যায়।
প্রাইভেট পড়ার কক্ষে আর কেউ না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষক ছাত্রীর উপর জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন চালায়।
স্থানীয়রা জানান, দেশে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে মানুষ দিশেহারা ও আতঙ্কগ্রস্থ। এই অবস্থায় সরকারি নির্দেশে সারা দেশের স্কুল-কলেজে পাঠদানসহ প্রাইভেট কোচিং-এ পড়ানো সম্পূর্ণ বন্ধ।
সরকারি এই নির্দেশ অমান্য করে প্রাইভেট পড়ানোর অযুহাতে উপজেলার ৪৩নং দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম মিয়া উপজেলার পূর্ব আব্দুল্লাপুরস্থ তার নিজ বাড়িতে একটি প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রীকে পড়ানোর নামে ডেকে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে।
এদিকে নির্যাতনের এই ঘটনা দড়িগাঁও এলাকায় জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। এ নিয়ে এলাকার যুব সমাজ সেলিম মাস্টারের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।
এই ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর বাবা কুলিয়ারচর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সদস্যদের সহযোগিতায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়া ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়াৎ ফেরদৌসীর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পরে গত ১৭ জুন স্কুল ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে সেলিম মাস্টারকে প্রধান আসামি করে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামা ৫/৬ জনকে আসামি করে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী-২০০৩ এর ১০ তৎসহ ৫০৬ দ.বি. ধারায় কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা (নং-৯) দায়ের করেন। মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন, মো. নিজাম উদ্দিন মেম্বার (৫০), মো. কামরুল হাসান (৪৫) ও এমাদ মিয়া (৩৫)।
স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম মিয়ার বিরুদ্ধে এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবারই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বরদের ম্যানেজ করে তাদের সহযোগিতায় ও ছত্রছায়ায় এসব যৌন নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে আসছিলেন ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের এই ‘হেডমাস্টার’। যে কারণে কখনো তার বিচার করতে পারেননি ভূক্তভোগীরা।
গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই তালুকদার বলেন, মামলার প্রধান আসামীকে গ্রেপ্তার করা মামলার জন্য বড় অগ্রগতি। এছাড়া অন্যান্য আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. কবির উল্লাহ ও ডুমরাকান্দা ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জামাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সূত্র: কিশোরগঞ্জ নিউজ